দোয়া একটি পবিত্র ইবাদত কিন্তু খুবই অবাক লাগে যখন দেখি কিছু মানুষ এই পবিত্র ইবাদতকে নিয়ে মশকারা করছে। তারা জানতে চায় – মেয়ে পটানোর ও পাগল করার দোয়া। কোন দোয়া পড়লে মেয়েরা প্রেমে পড়ে?
দোয়া করতে হয় ভালো কাজের জন্য। মেয়ে পটানো বা কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করা একটি গর্হিত কাজ। আপনি মজা বা তামাশার জন্য এটি করলে আপনাকে আমি একজন মুসলিম ভাই হিসেবে পরামর্শ দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। কেননা দোয়া নিয়ে মশকারা করে আপনি বিরাট পাপে নিমজ্জিত হয়েছেন।
আর যদি এটাও না জানেন যে, মেয়ে পটানোর ও পাগল করার দোয়া – নামে কোনো দোয়ার সন্ধান করা প্রকৃত পক্ষে দোয়া নিয়ে উপহাস করা। অথবা আপনি মনে করে এ রকম কোনো দোয়া থাকতে পারে, তাহলে এটা আপনার অজ্ঞতা। মেয়ে পটানো – এই কথাটি দ্বারা প্রথমত নারী জাতিকে হেয় করা হয়। আর তার চেয়ে বড় কথা হল এটি একটি মহাপাপ। ইসলাম প্রেম বা বিয়ের আগে কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক করাকে যিনা হিসাবে অবহিত করেছে। কোনো পাপ কাজের জন্য দোয়া হয় না। দোয়া করতে হয় কেবল ইহ ও পরকালে কল্যাণকর কাজের জন্য। পাপ কাজের জন্য দোয়া করাও পাপ।
মেয়ে পাগল করার দোয়া । বিকল্প ও বাস্তবতা
এমন কোন দোয়া নেই যেটি পড়লে কোনো মেয়ে পাগল হবে। এটি আপনার একটি অবান্তর চিন্তা। এই চিন্তাটি প্রকৃতপক্ষে শয়তানের কাছ থেকে আসে। কাজেই আপনি আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করুন এবং এসব চিন্তা থেকে বিরত থাকুন।
আপনি এর বিপরীতে নিজের বিয়ের জন্য দোয়া করুন। একজন ভালো মেয়ে আপনার স্ত্রী হিসেবে আসে সেই দোয়া করুন। কখনোই কোনো মেয়ে আপনার প্রেমে পড়ার জন্য দোয়া করতে যাবেন না। কেননা প্রথমত এটি একটি পাপ। আর দ্বিতীয়ত যেই মেয়েটি জন্য আপনি দোয়া করছেন, আপনি জানেন না সেই মেয়েটি আপনার জন্য কল্যাণকর হবে নাকি অশান্তির কারণ হবে। কাজেই আপনি আল্লাহর কাছে এটা বলুন, হে আল্লাহ আপনি আমার জন্য উপযুক্ত ও কল্যাণকর একজন জীবনসঙ্গী দান করুন।
মেয়ে পাগল করার দোয়া এর বিকল্প
আল্লাহতালা পৃথিবীতে মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের জন্য কিছু ভালোবাসা করেছেন হালাল আর কিছু ভালোবাসা করেছেন হারাম। বিয়ের পর স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যে ভালোবাসা তৈরি হয় সেটা হালাল। আর বিয়ের আগে যে প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি হয় সেটা হারাম।
মেয়ে পটানোর দোয়া – এটি হারাম ভালোবাসার প্রতি ধাবিত করে। তাই আপনি হারাম কোনো কাজের দোয়া না করে বিয়ের জন্য দোয়া করুন। আপনার অনাগত স্ত্রীকে আল্লাহ যেন দ্রুত আপনার কাছে এনে দেন সেই দোয়া করুন।
বিয়ের জন্য দোয়া
আপনি আপনার জীবনে সঠিক জীবনসঙ্গী চেয়ে আল্লাহর কাছে নিম্নের দোয়াটি করতে পারেন।
- দোয়া
“رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا”
উচ্চারণ: রব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইউনিন ওয়াজআ’লনা লিল মুত্তাকীনা ইমামা”।
অর্থ: “হে আমাদের প্রভু, আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের জন্য চক্ষুশীতলতকারী বানিয়ে দিন এবং আমাদেরকে পরহেজগারদের ইমাম ( নেতা ) বানিয়ে দিন।” (সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৭৪)
এটা ছাড়াও আপনি নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারেন। যেমন: “হে আল্লাহ, আমাকে এমন একজন সঙ্গী দিন, যে আপনার পথে আমাকে সাহায্য করবে এবং আমাকে দ্বীনের পথে চলতে প্রেরণা দিবে ইত্যাদি।”
মেয়ে পাগল করার দোয়া করা কেন হারাম?
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নৈতিক আদর্শ এবং শালীনতা লঙ্ঘন করে। এটি কুরআন ও হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক একটি কাজ। পুরুষ এবং নারীর মধ্যে শালীনতা বজায় রাখা এবং অবৈধ সম্পর্ক এড়িয়ে চলা অপরিহার্য। যাতে সমাজে পবিত্রতা এবং সততা বজায় থাকে।
কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা
কোরআন ও হাদিস স্পষ্টভাবে এই বিষয়টি হারাম করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর তোমরা যিনার কাছে যেও না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ।”
(সূরা আল-ইসরা, আয়াত ৩২)
এখানে আল্লাহ যিনার কাছাকাছি যেতেও নিষেধ করেছেন। বিবাহপূর্ব প্রেম নিশ্চয় একটি যিনা। তাই এটা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
শেষ কথা
দোয়া আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার একটি অনন্য উপায়। আপনি যখন আপনার জীবনে সকল কাজে ব্যর্থ হতে থাকবেন। অথবা যখন আপনার কোনো সাহায্য প্রয়োজন, আপনি পৃথিবীর সকল মানুষ থেকে নিরুপায় হয়ে যাবেন, তখন একমাত্র উপায় হল আল্লাহ সুবাহানাহুওয়া তা’আলার কাছে দোয়া করা।
একমাত্র তিনিই পারেন আপনার আপনার সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে। কাজেই আপনি আপনার জীবনে সমস্যা নিয়ে আপনার আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন। কিন্তু দোয়া নিয়ে কখনোই উপহার করতে যাবেন না। এমন কোনো বিষয়ে দোয়া করবেন না যেটা স্পষ্টভাবে হারাম। এটা আপনার ইমানের প্রশ্নে সন্দেহ সৃষ্টি করবে।
আরো পড়ুন :