লবণ খাওয়ার দোয়া । খাওয়ার আগে লবণ খাওয়া কি সুন্নত?

শেয়ার করুন

খাবার খাওয়ার পূর্বে ও পরে দোয়া পড়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। প্রতিটি সুন্নাহ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে বারাকাহ লাভের মাধ্যম। বিশেষত খাবারের সময় দোয়া পড়া আমাদের নবী (সা.) এর গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা। এই ব্লগ পোস্টে আমরা লবণ খাওয়ার দোয়া, খাবারের আগে ও পরে লবণ খাওয়ার সুন্নাহ কি না, এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

লবণ খাওয়ার দোয়া

নির্দিষ্টভাবে কোনো দোয়াকে লবণ খাওয়ার দোয়া হিসেবে আমরা কুরআন এবং হাদিসের কোনো জায়গায় পাইনি। কাজেই আমরা বলতে পারছিনা যে নির্দিষ্ট কোন দোয়া লবণ খাওয়া সময় পড়তে হবে। তবে খাবারের শুরুতে আমরা যে দোয়া করে থাকি – বিসমিল্লাহ ( بسم الله ) ,আপনি লবণ খাওয়ার শুরুতে পড়তে পারেন। কেউ কেউ বলে থাকেন ‘হানিআম মারিয়া’ (هنيئا مريئا) এ দোয়াটি লবণ খাওয়ার দোয়া। তাই চাইলে আপনি এটাও পড়তে পারেন।

মূল কথা হচ্ছে আমরা যেন লবণ যখন খাচ্ছি তখন আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার স্মরণ থেকে গাফিল না হয়ে যাই। কাজেই আপনি বিসমিল্লাহ বলে আল্লাহকে স্মরণ করে লবণ খাবেন। ঠিক একইভাবে ‘হানিআম মারিয়া’ বললেও আল্লাহকে স্মরণ করা হচ্ছে, যেহেতু এটি একটি কুরআনের একটি আয়াতের অংশ

শয়তান যেন কোনভাবেই আমাদের খাবারে অংশগ্রহণ না করে, শয়তানকে দূরে রাখাটাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়। আর বিসমিল্লাহ বললে শয়তান আমাদের খাবার থেকে দূরে থাকে। কাজেই আপনি বিসমিল্লাহ বলে লবণ আহার করবেন।

তাছাড়া এর পক্ষে উদাহরণ হচ্ছে আমরা যখন ভাত বা অন্য কোন খাবার খাই তখন বিসমিল্লাহ বলি। ঠিক একইভাবে যখন আমরা পানি পান করি তখন বিসমিল্লাহ বলি। আর ভাত এবং পানির মতো একটি খাদ্য হচ্ছে লবণ। অন্য যেকোনো ফল বা খাদ্যের শুরুতেও বিসমিল্লাহ বলে শুরু করাটা বাঞ্চণীয়।

লবণ খাওয়া দোয়া / কি সুন্নাত
লবণ খাওয়া দোয়া

খাওয়ার আগে লবণ খাওয়া কি সুন্নত?

না, খাবারের আগে লবন খাওয়া সুন্নাহ প্রমাণকারী কোনো হাদিস আমরা পাইনি। কাজেই এটা বলা যাবে না যে খাবারের আগে লবণ খাওয়া সুন্নাহ। যেহেতু সহিহ কোন হাদিস দ্বারা এটি প্রমাণিত নেই। কিছু হাদিস রয়েছে যেগুলো খাবরের আগে লবণ খাওয়ার উপকার বর্ণনা করে, কিন্তু সেই হাদিসগুলোর সনদ অত্যন্ত দুর্বল।

খাওয়ার আগে লবণ খাওয়া সম্পর্কিত হাদিস


قالت عائشة -رضي الله عنها-: من أكل الملح قبل كل شيء، دفع الله عنه ثلاثمائة وثمانين نوعًا من البلاء، أهونها الجذام. اهـ

অনুবাদ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকল কিছুর আগে লবণ খাবে, আল্লাহ তাকে ৩৮০ টি বিপদথেকে রক্ষা করেন। তার মধ্যে থেকে সবচেয়ে ছোটটি হচ্ছে কুষ্ঠরোগ।” ( আল ফিরদাউস লিদদাইলামি )

মন্তব্য: দাইলামির যে কিতাবে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন সেই কিতাবটি আলেমগণ দূর্বল বা জয়িফ হাদিসের কিতাব হিসাবে আলেমগণ আখ্যায়িত করেছেন। তাছাড়া এই হাদিসটি অন্য কোনো হাদিসের কিতাবে নেই। কাজেই এই হাদিসটি সূত্রগতভাবে দূর্বল। এটি দ্বারা খাবারের আগে লবণ খাওয়ার উপকারীতা প্রমাণ করা যথেষ্ট নয়।

عن عائشة -رضي الله عنها- قالت: لدغ النبي صلى الله عليه وسلم في إبهام رجله اليسرى، فقال: عليّ بذلك الأبيض الذي يكون في العجين، فجيء له بالملح، فوضعه في كفه، ثم لعق منه ثلاث لعقات، ثم بقيته على موضع اللدغة؛ فسكن عنه. اهـ.

অনুবাদ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, একবার “রাসুল (সা.)-এর বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দংশন হয়েছিল। তখন তিনি লবণের কথা বলেন, আমার কাছে সেই সাদা বস্তু ( লবণ ) নিয়ে আসো, যা (রুটিল ) কাইয়ে থাকে। অপতর তার কাছে লবণ নিয়ে আসা হল। তিনি তিনবার সেটা চাটেন এবং বাকি অংশটি দংশনের স্থানে লাগারেন। যার ফলে ব্যথা সেরে যায়।”

মন্তব্য: এই হাদিসটি আল-খাতিব আল-বাগদাদি তার “আল-মুতাফিক ওয়াল-মুফতারিক” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তবে এতে এমন কিছু ব্যক্তির সনদ রয়েছে যারা দুর্বল রাবি হিসাবে পরিচিত। যেমন আবদুল্লাহ ইবন জাফর আল-মাদিনি এবং আবদুল মালিক ইবন আবি সুলাইমান। তাই এই হাদিসও প্রমাণিত নয়।
এ রকম আরো কিছু হাদিস রয়েছে, যা সহিহ নয়। তাই খাবারে আগে লবণ খাওয়া সুন্নাহ বলা ঠিক হবে না।

কিছু সাধারণ প্রশ্ন

প্রশ্ন ১: খাবার শুরুর আগে কি লবণ খাওয়া সুন্নাহ?

উত্তর: না, হাদিসে কোথাও খাবারের আগে লবণ খাওয়ার নির্দেশনা নেই। তাই লবণ দিয়ে খাবার শুরু করা সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত নয়।

প্রশ্ন ২: লবণ খাওয়ার দোয়া কি?

উত্তর: লবণ খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। তবে খাবার শুরুর আগে “বিসমিল্লাহ” বলা সুন্নাহ এবং খাবার শেষে “আলহামদুলিল্লাহ” পড়া সুন্নাহ।

প্রশ্ন ৪: বেশি লবণ খাওয়া কি ক্ষতিকর?

উত্তর: হ্যাঁ, বেশি লবণ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রশ্ন ৫: হজমশক্তি বৃদ্ধিতে লবণের ভূমিকা কি?

উত্তর: লবণ হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিড ক্ষরণকে বাড়িয়ে হজমে সহায়তা করে।

প্রশ্ন ৬: লবণ খাওয়া কি ইসলামের স্বাস্থ্যবিধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

উত্তর: হ্যাঁ, ইসলামের খাদ্যাভ্যাসের নীতিতে স্বাভাবিক ও পরিমিত লবণ খাওয়া যাবে।

উপসংহার

আমরা এই পোস্টের মধ্যে দেখেছি যে লবণ খাওয়া সম্পর্কিত যে হাদিসগুলো বর্ণিত হয় সেগুলোর আসলে দুর্বল। কাজেই আপনি লবণ খাওয়া সম্পর্কে যে উপকারিতা জেনে এসেছেন সেগুলো বিশ্বাস করতে পারবেন না। যেহেতু এগুলোর সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলোর উপর আমরা নির্ভর করতে পারছি না।

তাছাড়া লবণ বেশি পরিমাণে লৈবণ খাওয়া এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীও নয়। খাবারের আগে এক চিমটি লবণ খাওয়ার অভ্যাস যাদের রয়েছে তারা সেই অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসা উত্তম। কেননা সেটি ভালো যখন লবণ খাওয়ার তখন যতটুকু দরকার ততটুকু খাওয়া। আর খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলাই যথেষ্ট।


শেয়ার করুন

Leave a Comment