স্ত্রীর গোপন জায়গায় হাত রেখে ঘুমালে? উলঙ্গ হয়ে কি ঘুমাতে পারবে?

পোস্টটি শেয়ার করুন

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালোবাসা, স্নেহ ও পরস্পরের প্রতি আন্তরিকতার ভিত্তিতে গঠিত। ইসলামে দাম্পত্য জীবনের শালীনতা ও গোপনীয়তা রক্ষা করার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেকেই জানতে চান, “স্ত্রীর গোপন স্থানে হাত রেখে ঘুমানো কি ইসলামে বৈধ?” কিংবা “উলঙ্গ হয়ে ঘুমানো ইসলামে অনুমোদিত কি না?”

এই ব্লগপোস্টে আমরা কুরআন-হাদিসের আলোকে স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করবো। পাশাপাশি, ইসলামে দাম্পত্য জীবনের শিষ্টাচার ও সীমারেখা কী, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আপনি যদি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিষয়ে সঠিক ইসলামিক নির্দেশনা জানতে চান, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

স্ত্রীর গোপন স্থানে হাত রেখে ঘুমানো সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

বৈধতা: স্বামী-স্ত্রী একে অপরের শরীর স্পর্শ করতে পারে, এমনকি ঘনিষ্ঠভাবেও থাকতে পারে। সহবাস ব্যতীত একে অপরকে আলিঙ্গন করে বা গোপন অঙ্গ স্পর্শ করে ঘুমানো ইসলামে নিষিদ্ধ নয়।

শর্ত: যদি এতে কোনো হারাম কাজ না হয় এবং উভয়ের সম্মতি থাকে, তাহলে এটি বৈধ। তবে যদি এতে স্ত্রী অস্বস্তি অনুভব করে বা বিরক্ত হয়, তাহলে তা এড়িয়ে চলাই উত্তম।

📖 হাদিসে এসেছে:
🔹 রাসূল ﷺ বলেছেন:

“তোমাদের কেউ যেন তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলনের পর চতুষ্পদ জন্তুর মতো আচরণ না করে (অর্থাৎ, ভালোবাসাহীনভাবে আচরণ না করে)।” (সহিহ বুখারি)

👉 উপদেশ:

  • পারস্পরিক সম্মতি ও ভালোবাসা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
  • যদি এতে কোনো গুনাহের কাজ (যেমন, সহবাসের পর গোসল ছাড়া ঘুমানো) না থাকে, তাহলে এটি বৈধ।
  • সবসময় স্ত্রীর আরামের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।

স্বামী স্ত্রী সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে কি ঘুমাতে পারবে?

এই প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবে মনে আসে যে, স্বামী স্ত্রী সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে কি ঘুমাতে পারবে? ইসলামে উলঙ্গ হয়ে ঘুমানোর বিধান কি? সংক্ষেপে বললে উত্তরটি হবে হ্যা, স্বামী স্ত্রী একসাথে উলঙ্গ হয়ে ঘুমাতে পারবে। এটা তাদের জন্য সম্পূর্ণরূপে বৈধ।

এবার উত্তরটি একটু বিস্তারিত বিশ্লেষণ করছি। আমরা কাপড় পরিধান করি মানুষের চোখে থেকে নিজেদের গোপনাঙ্গ ঢেকে রাখার জন্য।

কেননা গোপনাঙ্গ একদিকে লজ্জাস্থান অন্যদিকে কামভাব জাগ্রতকারী। তাই ইসলামি বিধান মতো এই স্থানগুলো মানুষের দৃষ্টির আড়াল করে রাখা ফরজ।

স্বামী স্ত্রী পরস্পর গোপনাঙ্গ ভোগ করার অধিকার রাখে। তাই তারা একে অপর থেকে ঢেকে রাখার প্রয়োজন নেই।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন –

অনুবাদ ‘ তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পরিধেয় আর তোমরা তাদের পরিধেয়।’ (সুরা বাকারা)

মুফাসসিরিনে কেরাম এই আয়াতের কয়েকটি ব্যাখ্যা পেশ করেছেন।

  • ১. পোশাক যেমন মানুষের গোপনাঙ্গ দেখে কিন্তু কারো কাছে তা বর্ণনা করে না ঠিক একইভাবে স্বামী স্ত্রী একে অন্যের গোপনাঙ্গ দেখে কিন্তু তার বিবরণ অন্যকে শুনায় না।
  • ২. পোশাক যেমন শীত ও গরমে মানুষকে আরাম দেয় ঠিক একইভাবে স্বামী স্ত্রী একে অন্যের জন্য সুখ ও আরামের ঠিকানা।
  • ৩. পোশাক থেকে যেমন গোপনাঙ্গকে গোপন রাখা যায় না ঠিক একইভাবে স্বামী স্ত্রী একে অপর থেকে নিজেদের গোপনাঙ্গ গোপন রাখতে হয় না।

যেহেতু স্বামী স্ত্রী একে অপর থেকে গোপনাঙ্গ ঢেকে রাখতে হয় না তাই তারা এক সাথে উলঙ্গ হয়ে ঘুমাতে অসুবিধা নেই।

স্বামী স্ত্রী উলঙ্গ হয়ে ঘুমানো বৈধ থাকার রেফারেন্স

রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – বলেন –

তোমার স্ত্রী ও বাঁদী ছাড়া অন্য সকল মানুষ থেকে তুমি তোমার লজ্জাস্থান হেফাজত করো। (তিরিমিজি শরিফ)

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে দুপুর বেলায় ঘুম ও রেস্টের সময় মানুষের ঘরে প্রবেশ কালে অনুমিত গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেন –

‘দুপুর বেলায় যখন তোমরা তোমাদের বস্ত্র ফেলে দাও।’ (সুরা নুর – ৫৮)

মুফাসসিরগণ বলেন এটা কাইলুলার সময়ের কথা বলা হয়েছে। কেননা মানুষ সেই সময়ে নিজ স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং বিবস্ত্র থাকে। তাই স্বামী স্ত্রী একসাথে উলঙ্গ হয়ে ঘুমাতে অসুবিধা নেই।

এরকম ভাবে যদি কেউ একা ঘুমায় আর অন্য কেউ তার ঘরে উঁকি মারার সম্ভাবনা না থাকে তখনও সে উলঙ্গ হয়ে ঘুমাতে পারবে। সে নারী হোক বা পুরুষ।

আয়িশা – রাদিয়াল্লাহু আনহা – বলেন

রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – আমার ঘরে আসার রাত্রি আসলে তিনি আমার কাছে আসলেন। এসে তার চাদর রেখে দিলেন। জুতাদ্বয় খুলে পায়ের কাছে রেখে দিলেন। অতপর চাদরের এক পাশ তার বিছানায় মেলে শুয়ে পড়লেন। তিনি একটু সময় শুয়ার পরে মনে করলেন আমি ঘুমিয়ে গেছি। তাই তিনি তার চাদর পরিধান করে দরজা খোলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। অতপর আমি আমার ওড়না ও চাদর পরিধান করে তার পেছনে পেছনে চললাম। অবশেষে তিনি জান্নাতুল বাকি- তে গেলেন। ( মুসলিম শরিফ)

এই হাদিস থেকে বুঝা যায় আয়িশা – রাদিয়াল্লাহু আনহা – রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সাথে বিবস্ত্র হয়ে ঘুমাতেন।

স্ত্রীর গোপন স্থানে হাত রেখে ঘুমানো ও উলঙ্গ হয়ে ঘুমানো বিষয়ে প্রশ্নোত্তর

১. স্ত্রীর গোপন স্থানে হাত রেখে ঘুমানো কি ইসলামে বৈধ?

✅ হ্যাঁ, ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের শরীর স্পর্শ করা বৈধ। তারা একে অপরের জন্য হালাল। তবে শালীনতা ও পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে এটি হওয়া উচিত।

📖 কুরআনে এসেছে:

“তারা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ, আর তোমরা তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ।” (সূরা বাকারা: ১৮৭)

🔹 অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সুরক্ষা ও প্রশান্তি প্রদানকারী। সুতরাং, ভালোবাসার অভিব্যক্তি হিসাবে এমন আচরণ বৈধ, যদি তা কোনো হারাম কাজে পরিণত না হয়।

২. উলঙ্গ হয়ে ঘুমানো কি ইসলামে জায়েজ?

✅ স্বামী-স্ত্রী একান্তে উলঙ্গ হতে পারে, তবে নবী ﷺ সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে ঘুমাতে নিরুৎসাহিত করেছেন।

📖 হাদিস:

রাসূল ﷺ বলেন, “তোমরা সতর (গোপনাঙ্গ) ঢেকে রাখো, একমাত্র স্ত্রী বা দাসী ছাড়া।” (তিরমিজি, ২৭৯৪)

🔹 অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের সামনে সতর খোলা বৈধ হলেও লজ্জাশীলতা বজায় রাখা উত্তম। তাই সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে ঘুমানোর পরিবর্তে কমপক্ষে একটি চাদর বা পাতলা কাপড় ব্যবহার করা ভালো।

৩. সহবাসের পর উলঙ্গ হয়ে ঘুমানো যাবে কি?

❌ না, কারণ সহবাসের পর ফরজ গোসল করা বাধ্যতামূলক। ইসলাম পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার প্রতি গুরুত্ব দেয়।

📖 হাদিস:

“যদি তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়, তবে পুনরায় মিলিত হওয়ার ইচ্ছে থাকলে ওযু করুক। এটি তার সতেজতা বৃদ্ধি করবে।” (মুসলিম, ৩৪৬)

🔹 অর্থাৎ, সহবাসের পর গোসল না করে থাকা ঠিক নয়, বিশেষ করে নামাজের সময় হলে।

৪. উলঙ্গ হয়ে ঘুমালে কি কোনো ক্ষতি হয়?

✅ শরীরের আরামের জন্য উলঙ্গ হয়ে ঘুমানো বিজ্ঞানসম্মত হলেও ইসলামে লজ্জাশীলতা ও শালীনতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই পুরোপুরি উলঙ্গ হওয়ার পরিবর্তে হালকা পোশাক পরিধান করাই উত্তম।

📖 হাদিস:

“লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি অংশ।” (বুখারি, ২৪)*

🔹 অর্থাৎ, যদিও ঘরের মধ্যে উলঙ্গ থাকা হারাম নয়, তবুও ইসলাম শালীনতা ও পর্দার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।

৫. স্বামী-স্ত্রীর একে অপরকে আলিঙ্গন করে ঘুমানো কি সুন্নত?

✅ হ্যাঁ, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা বাড়ানোর জন্য এটি একটি সুন্দর ও বৈধ উপায়।

📖 হাদিস:

নবী ﷺ তাঁর স্ত্রীদের ভালোবাসতেন এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতেন। (বুখারি, ৫১৮৯)

🔹 স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোবাসা বাড়ানোর জন্য এটি সুন্নতসম্মত এবং বৈধ।

৬. যদি কোনো ব্যক্তি সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে তার ওপর কোনো গুনাহ হবে?

❌ সরাসরি গুনাহ নয়, তবে এটি ইসলামি শালীনতার পরিপন্থী। একান্তে থাকলেও সতর ঢেকে রাখা উত্তম।

📖 হাদিস:

“আল্লাহ তার প্রতি রহম করেন, যে ব্যক্তি লজ্জাশীলতা রক্ষা করে।” (তিরমিজি, ২০০৯)

🔹 তাই একেবারে উলঙ্গ হয়ে না ঘুমিয়ে হালকা কাপড় পরা উত্তম।


পোস্টটি শেয়ার করুন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x