মাসিক হওয়ার দোয়া । গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দিকনির্দেশনা

পোস্টটি শেয়ার করুন

ইসলামে নারী জীবনের প্রতিটি দিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর মাসিক (হায়েজ) নারীদের জীবনের একটি স্বাভাবিক এবং অপরিহার্য অংশ। মাসিকঋতুস্রাব নারীদের শরীরে স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা প্রজনন ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। অনেকক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ থাকাটা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই মাসিক নিয়মিত হওয়ার জন্য সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি দোয়া ও আমল করা যেতে পারে।

ইসলাম এ প্রক্রিয়াকে সম্মান করে এবং এ সময়ে নারীদের জন্য কিছু নিয়ম ও নির্দেশনা দিয়েছে। যদিও মাসিকের সময় সালাত বা রোজা পালন করা নিষেধ, তবে এই সময়ে ইবাদতের বিকল্প হিসেবে দোয়া, তাসবিহ, এবং যিকর করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে।

এ ব্লগপোস্টে আমরা “মাসিক হওয়ার দোয়া” এবং মাসিক সম্পর্কিত ইসলামিক দিকনির্দেশনা, ফিকহের আলোকে নারীদের করণীয় এবং প্রচলিত ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা করবো। এছাড়াও, মাসিকের সময়ে নারীদের জন্য সুন্নাহসম্মত দোয়া এবং মাসিককালীন ইবাদতের বিকল্প নিয়ে কথা বলবো।

মাসিক হওয়ার দোয়া

প্রতি মাসে নারীর মাসিক হওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে বলে আমাদের কিছু জানা নেই। তবে যদি কোনো নারী চান যে তিনি তার মাসিক চালু করতে দোয়া করবেন, তবে তিনি আল্লাহর কাছে যে কোনো ভাষায়, যে কোনো দোয়া করতে পারেন।

اللهم اجعل حيضي على حسب العادة في النساء كل شهر

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজআল হাইদি আ’লা হাসবিল আ’দাতি ফিন নিসা কুল্লা শাহরি।

হে আল্লাহ, আমার মাসিককে অন্যান্য নারীদের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে করো,”

এরকম যে কোনো দোয়া, যা আপনি সহজ ও উপযোগী মনে করেন সে সব বাক্য ব্যবহার করে দোয়া করতে পারেন। মনে রাখতে হবে কেবল যে আরবি বাক্য দ্বারা দোয়া করতে হবে এমন কোনো কথা ইসলাম বলেনি। কাজেই আপনি বাংলা ভাষায় আপনার মাসিক হওয়ার জন্য উপযুক্ত শব্দ ও বাক্য দ্বারা দোয়া করতে পারেন। তবে দোয়া করার শর্ত এবং আদব অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

মাসিকের সময় কী করণীয়?

মাসিকের সময় নারীকে নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তার মানে এই নয়, যে তিনি একেবারে ইবাদতহীন থাকবেন। ইসলামে এই সময়ে করণীয় কিছু আমল ও দোয়া রয়েছে যা নারীরা পালন করতে পারেন।

দোয়া ও যিকর

মাসিকের সময় সরাসরি সালাত বা কুরআন তিলাওয়াত নিষিদ্ধ হলেও, দোয়া এবং যিকর করা নিষিদ্ধ নয়। এই সময়ে নারীরা আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং দোয়া করতে পারেন। বিশেষ করে মাসিক শুরু হলে নিচের দোয়াটি করতে পারেন:

১. মাসিকের সময় দোয়া:

“اللهم اجعل هذا الطهر لي نورا واغفر لي ذنوبي”

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজআল হাযায তুহরা লি নূরান ওয়া গফির লি জুনুবি।

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ, এই পবিত্রতাকে আমার জন্য নূর বানাও এবং আমার পাপগুলো মাফ করো।”

২. ইস্তিগফার করা

মাসিকের সময় নারীরা ইস্তিগফার করতে পারেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। এই সময়ে আল্লাহকে স্মরণ করে যিকর ও ইস্তিগফার করা আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম উপায়।

৩. ইসলামিক জ্ঞান অর্জন

মাসিকের সময় সালাত বা রোজা থেকে বিরত থাকলেও, এ সময়কে ইসলামিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। কুরআন এবং হাদিসের তাফসির পড়া, ইসলামিক বই পড়া ইত্যাদি করে এই সময়কে ফলপ্রসূ করা যায়।

মাসিকের সময় নারীদের জন্য সুন্নাহ নির্দেশনা

ইসলাম নারীদের মাসিকের সময়ে তাদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। এ সময়ে কিছু করণীয় সুন্নাহর ভিত্তিতে বর্ণিত হয়েছে:

১. পবিত্রতা বজায় রাখা

মাসিকের সময় পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত শরীর পরিষ্কার করা এবং পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ইসলাম নারীদের এই সময়ে নির্দিষ্ট সময় পরপর অজু করার সুপারিশ করেছে, যদিও অজুর পর সালাত করা নিষিদ্ধ।

২. ইবাদতের বিকল্প খুঁজে নেওয়া

ইবাদতের বিকল্প হিসেবে কুরআনের দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করতে পারেন। যেমন, “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি” দোয়াটি মাসিকের সময়েও পড়া যেতে পারে। এছাড়াও, ফজিলতপূর্ণ দোয়া ও যিকর করার জন্য অন্যান্য অনেক হাদিস বর্ণিত আছে।

মাসিককালীন নিষেধাজ্ঞা ও বিশেষ নির্দেশনা

ইসলামে মাসিকের সময় কিছু নির্দিষ্ট বিষয় নারীদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম:

১. সালাত আদায় নিষিদ্ধ

মাসিকের সময় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মাসিক শেষ হলে পুনরায় নামাজ শুরু করতে হবে। আর মাসিকচলাকালে বিগত হওয়া নামাজগুলো কাজা আদায় করতে হবে না।

২. রোজা রাখা নিষিদ্ধ

মাসিকের সময় রোজা রাখা নিষিদ্ধ হলেও, পরবর্তীতে সেই রোজাগুলোর কাজা করতে হবে।

৩. কুরআন তিলাওয়াত নিষিদ্ধ

মাসিকের সময় সরাসরি কুরআন তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ। তবে ইবাদতের বিকল্প হিসেবে কুরআন শরিফের অর্থ পড়া বা তাৎপর্য সম্পর্কে জানা যেতে পারে।

মাসিক ও ইবাদত । কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা

ইসলামিক ফিকহে নারীদের মাসিক নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও, অনেক সময় সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মাসিকের সময় নারীদেরকে একেবারে ইবাদত থেকে বিরত রাখতে চাওয়া। বাস্তবে, মাসিকের সময় নারীরা ইবাদতের বিকল্প খুঁজে নিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে নৈকট্য অর্জনের প্রচেষ্টা চালাতে পারেন।

মাসিক শেষে করণীয়

মাসিক শেষ হলে প্রথমে ফরজ গোসল করা সুন্নাহ। তারপর আপনি আবারও স্বাভাবিক ইবাদতের জীবনযাপন করতে পারবেন। হাদিসে বর্ণিত আছে:

হাদিস:

উম্মে সালামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যখন তোমার মাসিক শেষ হয়, তখন গোসল কর এবং নামাজে ফিরে যাও।” (মুসলিম, হাদিস নং ৩৩২)

মাসিক হওয়ার দোয়া বিষয়ে এফএ কিউএস

প্রশ্ন: মাসিক শুরু হলে কী দোয়া পড়তে হবে?

উত্তর: মাসিক শুরু হলে নিচের দোয়াটি পড়া যেতে পারে:

“اللهم اجعل هذا الطهر لي نورا واغفر لي ذنوبي”

(অর্থ: হে আল্লাহ, এই পবিত্রতাকে আমার জন্য নূর বানাও এবং আমার পাপগুলো মাফ করো।)

প্রশ্ন: মাসিকের সময় কুরআন পড়া যাবে কি?

উত্তর: সরাসরি কুরআন তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ, তবে কুরআনের অর্থ পড়া যেতে পারে।

প্রশ্ন: মাসিকের সময় ইবাদতের বিকল্প কী?

উত্তর: মাসিকের সময় দোয়া, যিকর, ইস্তিগফার, এবং ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করা ইবাদতের বিকল্প হতে পারে।

প্রশ্ন: মাসিকের সময় গোসল করার বিধান কী?

উত্তর: মাসিকের সময় নিয়মিত পবিত্র থাকা এবং পবিত্রতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। মাসিক শেষে ফরজ গোসল করতে হবে।

প্রশ্ন: মাসিকের সময় কি কাজা নামাজ পড়তে হবে?

উত্তর: মাসিকের সময় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ হলেও কাজা নামাজ পড়ার প্রয়োজন নেই।

উপসংহার

মাসিক একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া এবং ইসলামে এ সময়ে নারীদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাসিকের সময় করণীয় দোয়া ও ইবাদতের বিকল্প সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে এই সময়ে নারী আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন বজায় রাখতে পারেন। ইসলামের নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করলে এই সময়টিও ইবাদতের বিশেষ সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।


পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Comment