আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি

পোস্টটি শেয়ার করুন

এই দোয়াটি অবতরণের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম বলেন আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কোন রাতটি লায়লাতুল ক্বাদর, সেটা যদি আমি জানতে পারি তবে সেই রাতে কোন দোয়াটি করব? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি – আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি, এই দোয়াটি করবে।

দোয়াটি মূল অংশ ও বাংলা অনুবাদ

এই দোয়াটি বেশ কয়েকটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। ইমাম নাসাঈ তাঁর সুনানে কুবরা গ্রন্থে, ইমাম ইমাম ক্বাদায়ি তাঁর মুসনাদুশ শিহাব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তারা ছাড়াও ইমাম তিরিমিযিসহ অন্য অনেকে এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তবে সুনানুত তিরিমিযি গ্রন্থে এই দোয়াটির মধ্যে একটি শব্দ অতিরিক্ত হিসাবে যুক্ত আছে।

এবার আমারা মূল দোয়া ও তার বাংলা অনুবাদ দেখে নেই। তারপর এর ব্যাখ্যা, উপকারীতা ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা করব। মূল দোয়াটি হল নিম্মরূপ।

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।

অনুবাদ: হে আল্লাহ, আপনি পাপ ক্ষমাকারী। আপনি পাপ ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি দোয়া। বাংলা অনুবাদ
আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি দোয়া। বাংলা অনুবাদ

দোয়াটি যে হাদিসে রয়েছেে

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর আলামুল মুকিউন গ্রন্থে বলেন,

سألَتْهُ صلى اللهُ عليهِ وسلَّمَ عائشةُ رضي الله عنها إنْ وافقتُها فبِمَ أدعو ؟ قال قولي اللهمَّ إنك عفوٌ تحبُّ العفوَ فاعفُ عني

অনুবাদ: আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, যদি আমি লাইলাতুল ক্বাদর পেয়ে যাই তাহলে সেই রাতে কোন দোয়াটি করব? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি – আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি, এই দোয়াটি করবে। ( বর্ণনাকারী: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আহনা, ‍মুহাদ্দিস : ইবনুল কাইয়্যিম, সূত্র: ইলামুল মুয়াক্কিয়িন, পৃষ্ঠা : ২৪৯, খন্ড : ৪, হাদিসের হুকুমের সারসংক্ষেপ: সহিহ)

দোয়াটির ব্যাখ্যা

এই দোয়াটির মধ্যে কয়েকটি শব্দ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রতিটি শব্দের আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ আমারা এখানে করছি।

আল্লাহুম্মা

ভাষাবিদদের ঐক্যমতে আল্লাহুম্মা অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ। এটা দোয়া বা আবেদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। তাই আল্লাহুম্মা গাফুরুর রাহিম বলা হয় না, তবে আল্লাহুম্মা ইগফির লি, বলা হয়।

ইন্নাকা আফুউন

আল আফউ শব্দটি বান্দার পাপ ক্ষমা করার ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যবহার হয়। মানুষ কর্তৃক ফজর পরিত্যাগের পাপ হোক বা হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার পাপ হোক, উভয় ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা যায়।

আল আফুউয়ু আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নামগুলোর একটি। এই দোয়ায় মূলত তাঁর এই নামটি উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়াল এই গুণবাচক নামটি আমাদের সর্বপ্রকার পাপ ক্ষমা করার অর্থকে অন্তর্গত রেখেছে। আমাদের তাওবা, ইস্তেগফার ইত্যাদি কারণে তিনি আমাদের ক্ষমা করার সকল পন্থা ও অবস্থা এই অর্থের মধ্যে শামিল। যেমন তিনি বলেন,

(وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُوا عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ)

তিনি সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন, তাদের পাপগুলো ক্ষমা করেন এবং তিনি তাদের কর্ম সম্পর্কে অবহিত। (সুরা : আশ-শূরা, আয়াত ২৫)

তুহিব্বুল আফওয়া

বস্তুত আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের শাস্তি প্রদানের চেয়ে ক্ষমা করাকে বেশি পছন্দ করেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করতে পছন্দ করাটা কুরআন ও হাদিস সুস্পষ্টভাবে একাধিক স্থানে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালার রহমত তাঁর গাদাব বা রাগে আচ্ছাদন করে রেখেছে। এই হাদিসটির দ্বারা এটাও প্রমাণ হয় যে, আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নাম দ্বারা ওসিলা গ্রহণ বৈধ রয়েছে।

ফাফু আন্নি

ফাফু আন্নি ( আমাকে ক্ষমা করুন ) এটা স্পষ্টভাবে আল্লাহ তায়ালার সামনে নিজের পাপ ও ত্রুটির কথা স্বীকার এবং তাঁর অগাধ ক্ষমায় নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস। এটির ব্যাখ্যামূলক অর্থ হল – আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আপনার আনুগত্যে আমার ত্রুটি ও ভ্রান্তি বা হামারে লিপ্ত হওয়ার কারণে আমাকে শাস্তি দিবেন না।

দোয়াটির উপকারীতা

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি, এই দোয়াটির অনেক উপকার ও কল্যাণ রয়েছে। আমরা এখানে কয়েকটি আলোচনা করছি।
১. সব সময়আল্লাহ তায়াল নিকট ক্ষমা চওয়া মুস্তাহাব। বিশেষভাবে লাইলাতুল কদরে এই দোয়াটি করা মুস্তাহাব।
২. মানুষ তার জীবনের সকল পাপ থেকে ক্ষমা লাভের সুযোগ। এটা প্রত্যেকের শ্রেষ্ট অর্জন হিসাবে গণ্য।
৩. আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ। যে বেশি বেশি দোয়া করে আল্লাহ তায়ালা তাকে তার পাপ ক্ষমা করেন। যেমন তিনি বলেন,

(إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاءُ وَمَن يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْماً عَظِيماً)

অনুবাদ: নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। আর শিরক ব্যতীত অন্যান্য সকল পাপ, যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে। ( সূরাঃ আন-নিসা : আয়াত ৪৮)

৪. আল্লাহর গুণাবলী স্বীকার: দুআটি আল্লাহর দুটি গুণকে তুলে ধরে: “আফুউউ” (অতি ক্ষমাশীল) এবং “তুহিব্বুল আফওয়া” (আপনি ক্ষমা পছন্দ করেন)। এটি আল্লাহর করুণা ও ক্ষমার জন্য প্রশংসা করার একটি উপায়।

৫. আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি: এই দোয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত ক্ষমা চাওয়ার দ্বারা আত্মার পরিশুদ্ধি এবং বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে অবদান রাখে।


পোস্টটি শেয়ার করুন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x