মানুষের জীবন সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির এক অপূর্ব মিশ্রণ। প্রতিটি পরিস্থিতিই আসে কোনো না কোনো হিকমত বা পরীক্ষার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। একজন মু’মিনের বৈশিষ্ট্য হলো—সে সব অবস্থায় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ঠিক সেই কৃতজ্ঞতার এক অনন্য প্রকাশ হলো—”আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল” — অর্থাৎ “সকল অবস্থায়ই আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা।”
এই বাক্যটি শুধু মুখের কথা নয়, বরং এটি অন্তরের গভীর তাওয়াক্কুল, সন্তুষ্টি ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থার বহিঃপ্রকাশ। একজন প্রকৃত মুসলিম জানে—তার জীবনে যা ঘটে, তা চিরন্তন জ্ঞানসম্পন্ন আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, আর তাতে লুকিয়ে থাকে কল্যাণ, হোক তা প্রকাশ্যে অথবা অপ্রকাশ্য।
এই ব্লগপোস্টে আমরা আলোচনা করব—এই বাক্যটির অর্থ, তাৎপর্য, হাদীস থেকে এর উৎস, বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ এবং কীভাবে এ বাক্য একজন মানুষের চিন্তা ও জীবনবোধে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
✦ “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল” — প্রতিটি অবস্থায় কৃতজ্ঞতা
❖ বাক্যটির অর্থ ও বিশ্লেষণ
“الْـحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ”
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল।
বাংলা অর্থ: “সব অবস্থাতেই আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা।”
এই বাক্যটি আমাদের শিক্ষা দেয়—সুখে যেমন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হয়, তেমনি দুঃখেও কৃতজ্ঞ থাকতে হয়। কারণ মুমিনের জন্য প্রতিটি পরিস্থিতিই লাভজনক—সুখে কৃতজ্ঞতা, দুঃখে ধৈর্য।
❖ হাদীসে এর গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন:
“যখন কোনো বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ হয়, তখন সে বলে: ‘আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল’। তখন তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” — [আল-মুআজামুল আউসাত: ৬৭৪৭]
আরেক হাদীসে এসেছে:
“একজন মুমিনের অবস্থা আশ্চর্যজনক! তার সব অবস্থাই কল্যাণকর। যদি সে সুখে থাকে—সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, এতে তার জন্য কল্যাণ। আর যদি সে দুঃখে পড়ে—সে সবর করে, তাতেও তার জন্য কল্যাণ।” — [সহীহ মুসলিম: ২৯৯৯]

❖ কখন বলা হয় এই বাক্যটি?
এই বাক্যটি দোয়া বা প্রতিক্রিয়া হিসেবে বলা হয়:
- দুঃখজনক সংবাদ শোনার পর
- কষ্টদায়ক পরিস্থিতিতে
- বিপদে পড়লে
- হঠাৎ কিছু হারিয়ে গেলে
যেমন কেউ যদি বলে, “আমার চাকরি চলে গেছে”, একজন মুমিন বলবে, “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল”—কারণ সে জানে, এটি হয়তো তার জন্য পরীক্ষাও হতে পারে, আবার কোনো কল্যাণের দরজা।
❖ কেন কৃতজ্ঞতা দেওয়া জরুরি?
- কৃতজ্ঞতা ঈমানের লক্ষণ: একজন মুমিন বিশ্বাস করে—যা কিছু ঘটে তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই। তাই তার মুখে কেবল প্রশংসার বাণী।
- কষ্টের মাঝেও কল্যাণ লুকিয়ে থাকে: আমরা জানি না কোন জিনিসে আমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। দৃষ্টিতে খারাপ হলেও, বাস্তবে হতে পারে সেটাই সবচেয়ে উত্তম।
- কৃতজ্ঞতাকারী বান্দাকে আল্লাহ ভালোবাসেন: কুরআনে আল্লাহ বলেন: “وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ”
“আর আল্লাহ কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেবেন।” — (সূরা আল-ইমরান: ১৪৪)
❖ বাস্তব জীবনের উদাহরণ
- কেউ অসুস্থ হয়ে গেল—সে যদি বলে: “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল”, তাহলে সে জানে, আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহ দূর করছেন।
- কেউ পরীক্ষায় ফেল করল, সে বলল: “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল”, কারণ হয়তো এ ফল তার জন্য ভালো।
❖ আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকার শক্তি
এই বাক্যটি শুধু মুখে বললেই হবে না, অন্তর থেকেও মানতে হবে—“আমি আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট।”
তাহলেই অন্তরে শান্তি আসবে, হতাশা কেটে যাবে, বিশ্বাস দৃঢ় হবে।
❖ আমাদের জীবনে এই বাক্যটির ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত?
- দৈনন্দিন কথোপকথনে এই বাক্যটি সংযোজন করুন।
- দুঃসংবাদ শোনার সময় মুখে অশ্লীল বা হতাশাজনক শব্দ নয়, বরং বলুন: “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল”।
- সন্তানদের শেখান যে—ভালো-মন্দ সব অবস্থাই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে।
✦ কুরআনের আয়াতসমূহ ও তাৎপর্য
📖 ১. সূরা ইব্রাহীম: আয়াত ৭
“وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ”
উচ্চারণ: Wa idh ta’adh-dhana rabbukum la’in shakartum la’azeedannakum, wa la’in kafartum inna ‘azaabee lashadeed
বাংলা অনুবাদ: “তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা দিয়েছেন: যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, তবে অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য (নিয়ামত) বৃদ্ধি করব; আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি কঠোর।”
— (সূরা ইব্রাহীম: ৭)
🔍 ব্যাখ্যা: এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে কৃতজ্ঞতা ও অকৃতজ্ঞতার পরিণতি ব্যাখ্যা করেছেন। আল্লামা ইবনে কাসির বলেন, এই আয়াত প্রমাণ করে কৃতজ্ঞতা করা একটি শক্তিশালী ইবাদত, যার দ্বারা নিয়ামত বাড়ে।
📖 ২. সূরা লুকমান: আয়াত ১২
“وَلَقَدْ آتَيْنَا لُقْمَانَ الْحِكْمَةَ أَنِ اشْكُرْ لِلَّهِ ۚ وَمَن يَشْكُرْ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ”
বাংলা অনুবাদ: “আমি লুকমানকে হিকমত দান করেছি—আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আর যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো নিজের উপকারের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, সে যেন জানে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।” — (সূরা লুকমান: ১২)
🔍 ব্যাখ্যা: ইবনে কাসির বলেন—এই আয়াত ইঙ্গিত দেয়, কৃতজ্ঞতা শুধু আল্লাহর হক নয়; বরং এটি মানুষের আত্মিক উন্নয়ন এবং প্রশান্তির মূল উপায়।
📖 ৩. সূরা আন্-নাহল: আয়াত ৫৩
“وَمَا بِكُم مِّن نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ”
বাংলা অনুবাদ: “তোমাদের প্রতি যে কোনো নিয়ামত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই।” — (সূরা নাহল: ৫৩)
🔍 ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহর নিয়ামতের স্বীকৃতি দেওয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আল্লামা কুরতুবি বলেন—এ আয়াতের মূল শিক্ষা হলো, মানুষ যেন কোনো অবস্থাকে নিজের যোগ্যতার ফল মনে না করে, বরং আল্লাহর অনুগ্রহ জানে।
📖 ৪. সূরা আল-বাকারা: আয়াত ১৫২
“فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ”
বাংলা অনুবাদ: “তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” — (সূরা বাকারা: ১৫২)
🔍 তাফসির আল-জালালাইন মতে, এখানে কৃতজ্ঞতা শুধু মুখে বলা নয়, বরং অন্তরের বিশ্বাস ও কর্মে আনুগত্য—এটাই প্রকৃত ‘আলহামদুলিল্লাহ’।
✦ তাফসিরবিদদের সার-উদ্ধৃতি:
🔹 ইমাম ইবনে কাসির (রহ.)
- “শুকর অর্থ শুধু ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা নয়; বরং তা অন্তরে বিশ্বাস, মুখে উচ্চারণ ও কাজে প্রকাশ।”
- তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল” এমন একটি বাক্য যা সব ধরনের পরিস্থিতিতে ঈমানদারদের ইবাদতের পরিচয় বহন করে।
🔹 আল্লামা তানতাওয়ী (তাফসির আল-ওয়াসীত)
- তিনি বলেন: “মানবজীবনে আল্লাহর পরীক্ষা একটি ধ্রুব সত্য। এর বিপরীতে ঈমানদারদের উচিত কেবল আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল রাখা এবং কৃতজ্ঞ থাকা।”
🔹 ইমাম গাযযালী (রহ.)
- “কৃতজ্ঞতা তিন ভাগ:
১. অন্তরে স্বীকৃতি,
২. মুখে প্রশংসা,
৩. কাজের মাধ্যমে অনুগত্য।
আর এই তিনটি পূর্ণ হলে বলা যায়—ব্যক্তি সত্যিই বলেছে ‘আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল’।”
✅ আপনি এই অংশের পর যুক্ত করতে পারেন:
- 📌 “এই আয়াতগুলো কীভাবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়” – বিশ্লেষণ
- 📌 “এই দোয়াকে অন্তরে ধারণ করার উপায়”
- 📌 “আধুনিক জীবনে শুকরিয়া ও হতাশার টানাপড়েন”
✦ ভুল ব্যবহার ও ভুল বোঝাবুঝি
✅ ১. মুখে বললেও অন্তরে বিরক্ত থাকা
অনেকে দুঃসংবাদ পেলে মুখে বলে ফেলেন “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল”, কিন্তু অন্তরে আল্লাহর ফয়সালায় অসন্তুষ্ট থাকেন।
🛑 ভুল: কৃতজ্ঞতা শুধু মুখের কথা নয়; অন্তরের রাযা (সন্তুষ্টি) ও আমলের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
❝আলহামদুলিল্লাহ বলা আর আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া—দুটি এক নয়।❞
✅ ২. নাটকীয় বা ঠাট্টার ছলে বলা
কেউ দুর্ঘটনা বা মজার কোনো ঘটনাকে ঠাট্টার ছলে বলে—”আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল!”
🛑 ভুল: এটি ইবাদতের বাক্য, মজার ছলে বললে এর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়।
✅ ৩. আত্মপ্রবঞ্চনা করে বলা
কেউ কষ্টে আছে, কোনো চেষ্টাও করছে না, পরিবর্তনের ইচ্ছাও নেই—কিন্তু বলে “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল”।
🛑 ভুল: এই বাক্য হতাশার বাহানা নয়। বরং চেষ্টা, সবর ও ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতার প্রকাশ।
✅ ৪. শোকের সময় ‘ইন্না লিল্লাহ’ না বলে কেবল ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা
মৃত্যু বা বড় বিপর্যয়ের সময় প্রকৃত প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত: “إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ”
🛑 ভুল: শোক ও বিপদের সময় শুধু “আলহামদুলিল্লাহ” বললে পরিপূর্ণ প্রতিক্রিয়া হয় না; বরং উভয় দোয়া নিজের জায়গায় যথাযথ।
✅ ৫. অন্যকে তাচ্ছিল্য করে ব্যবহার
কখনো দেখা যায়, কেউ দুঃস্থ বা কষ্টে থাকা কারো কথা শুনে বলে—
“আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল! আমাদের তো আল্লাহ ভালো রেখেছেন!”
🛑 ভুল: এতে যেন এক ধরনের অহংকার মিশে থাকে। দোয়ার মাঝেও বিনয় থাকা উচিত।
✅ ৬. শুধু দুঃখে বলার জন্য মনে করা
অনেকেই মনে করেন, “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল” শুধু দুঃখ বা কষ্টে বলার বাক্য।
🛑 ভুল: এটি সকল অবস্থায় কৃতজ্ঞতার প্রকাশ—সুখে, দুঃখে, স্বাস্থ্য, অসুস্থতা, লাভ, ক্ষতি—সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
✅ ৭. কথার ফাঁকে ব্যবহারে মনোযোগ না থাকা
অনেক সময় আমরা এমনভাবে বলি, যেন এটি একটি রুটিন বাক্য—“হুম, চাকরি গেল… আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল…”
🛑 ভুল: এই বাক্য যখনই বলা হোক, তাতে আন্তরিকতা, গভীরতা ও তাওয়াক্কুল থাকা উচিত।
✅ পরামর্শ:
- ✦ এই বাক্য মন থেকে বলুন, কেবল মুখে নয়।
- ✦ এটি উপহাস নয়, ইবাদত—তাই ব্যবহারেও খেয়াল রাখুন।
- ✦ এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি ও গভীর বিশ্বাস প্রকাশ করুন।
✦ সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQ)
❓ ১. “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল” কোন হাদীসে এসেছে?
✅ এটি একটি সহীহ হাদীসে এসেছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি কোনো বিপদে পতিত হলো আর বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল’, সে যা হারিয়েছে আল্লাহ তাকে তার চেয়েও উত্তম কিছু দান করবেন।” — (মুসনাদ আহমাদ: ৭৩৫৪, সহীহুল জামে’: ৬০১৯)
❓ ২. এই দোয়া কি কেবল কষ্ট বা বিপদের সময় বলার জন্য?
🟡 না, এই দোয়া বলা যায় সব পরিস্থিতিতে — সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, স্বাস্থ্য-অসুস্থতা সব অবস্থায়।
এটি একটি পূর্ণাঙ্গ কৃতজ্ঞতার ঘোষণা।
❓ ৩. দোয়ার অর্থ না জানলেও বললে কি সওয়াব হয়?
✅ হয়। তবে অর্থ জানলে তা অন্তরে গভীর প্রভাব ফেলে, এবং মনের মধ্যে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি ও নির্ভরতা তৈরি হয়। তাই শেখা উত্তম।
❓ ৪. এই বাক্যের সাথে শুধু ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলার পার্থক্য কী?
🔹 ‘আলহামদুলিল্লাহ’ সাধারণ প্রশংসা বা কৃতজ্ঞতা।
🔹 কিন্তু ‘আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল’ মানে—যে অবস্থাই হোক না কেন, আমি আল্লাহর প্রশংসা করি।
👉 অর্থাৎ এটি সন্তুষ্টির সর্বোচ্চ প্রকাশ।
❓ ৫. এই বাক্য কি মুসিবতের সময় ধৈর্য প্রকাশের একটি উপায়?
✅ হ্যাঁ। এটি বলার মাধ্যমে একজন মু’মিন আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার ঘোষণা দেয়, যা ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলের অংশ।
❓ ৬. এই বাক্য কি দুঃখের সময় মনকে শান্ত করে?
✅ একেবারেই। এটি একটি ‘রূহানী মেডিসিন’। হৃদয়কে কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে সান্ত্বনা দেয়। আজকাল মনোবিজ্ঞানেও “গ্র্যাটিচিউড থেরাপি” একটি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি।
❓ ৭. এই দোয়া কি মুনাজাতে বলা যায়?
✅ হ্যাঁ, আপনি চাইলে নিজের দোয়ার শুরুতে, মাঝখানে বা শেষে এই বাক্যটি বলতে পারেন। এটি দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়ায়।
❓ ৮. এই বাক্য শিশুদের শেখানো কতটা জরুরি?
✅ খুবই জরুরি। তারা যদি ছোটবেলা থেকেই এই বাক্যের তাৎপর্য বোঝে, তবে বিপদে হতাশ না হয়ে দৃঢ়তা ও ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিখবে।
❓ ৯. এই বাক্য কীভাবে অভ্যাসে পরিণত করব?
📌 নিচের কৌশলগুলো কাজে লাগাতে পারেন:
- মোবাইলের ওয়ালপেপারে লিখে রাখুন
- প্রতিদিন ৫ বার নিজেকে মনে করান
- পরিবারের সবাই মিলে বলার অভ্যাস গড়ুন
- ছোট একটা “ধন্যবাদ জার্নাল” রাখুন যেখানে প্রতিদিন ৩টি বিষয় লিখবেন, যার জন্য কৃতজ্ঞ
❓ ১০. এই দোয়া কি সবসময় উচ্চস্বরে বলতে হবে?
🟡 না। চুপচাপ অন্তরে বললেও যথেষ্ট। তবে কখনো-কখনো মুখে উচ্চারণ করলে হৃদয়ে তার প্রভাব আরও গভীর হয়।
✦ উপসংহার
জীবনের প্রতিটি অবস্থায় এই বাক্যটি যেন আমাদের অন্তরের আওয়াজ হয়। সুখে আত্মম্ভরিতা নয়, দুঃখে হতাশা নয়—বরং সবসময় বলি:
“আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল”।
এই একটি বাক্য আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে, আমাদের হৃদয়কে প্রশান্ত করতে পারে, আর পরকালের জন্য হতে পারে অফুরন্ত সওয়াবের ভাণ্ডার।