আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার । অর্থ, তাৎপর্য ও ফজিলত

Share this post

মুসলিম জীবনে দোয়া হলো আল্লাহর সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের একটি মহান উপায়। দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের চাওয়া-পাওয়া, ভয়, আশা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। ”আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” এমন একটি দোয়া।

ভয়ানক দোজখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দোয়াটি পাঠ করা জরুরী। এই সংক্ষিপ্ত দোয়ার মধ্যে রয়েছে গভীর অর্থ, প্রার্থনা এবং আত্মসমর্পণের আহ্ববান। এই ব্লগপোস্টে আমরা এই দোয়ার আরবি রূপ ও বাংলা অর্থ, এর সাথে সম্পর্কিত হাদিস এবং ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।

আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার আরবি ও বাংলা অর্থ

আরবি উচ্চারণ:

اللهمّ أجِرْنِي مِنَ النّارِ

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করুন।

এই দোয়ার ভাষাটি সহজ, কিন্তু এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। এটি আল্লাহর করুণা এবং সুরক্ষার জন্য নিবেদন করা হয়।

শব্দ বিশ্লেষণ:

اللهمّ (আল্লাহুম্মা): হে আল্লাহ, এটি একটি সম্বোধন, যা আল্লাহকে ডাকার জন্য ব্যবহার করা হয়।

أجِرْنِي (আজিরনি): আমাকে রক্ষা করুন বা আশ্রয় দিন। এটি আল্লাহর সাহায্য এবং করুণার আবেদন।

مِنَ النّارِ (মিনান্নার): দোজখের আগুন থেকে। এটি দোজখের শাস্তি থেকে সুরক্ষার জন্য সরাসরি প্রার্থনা।

আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার Infographic
আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার Infographic

এই দোয়ার উৎস ও হাদিসের উল্লেখ

“আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” দোয়াটি প্রাথমিকভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। হাদিসে বলা হয়েছে যে, এই দোয়া সাতবার পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা দোজখ থেকে রক্ষা করবেন।

হাদিসের উৎস

হাদিস ১

আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাতের প্রার্থনা করে, তখন জান্নাত বলবে: ‘হে আল্লাহ, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান।’ এবং যদি কেউ তিনবার দোজখ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তখন দোজখ বলবে: ‘হে আল্লাহ, তাকে দোজখ থেকে রক্ষা করুন।’” (আহমদ, শুয়াইব আল-আর্ণাউত বলেছেন: এই হাদিসের সনদ হাসান।)

হাদিস ২

আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করবে, জান্নাত বলবে: ‘হে আল্লাহ, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান।’ আর যে ব্যক্তি তিনবার দোজখ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে, দোজখ বলবে: ‘হে আল্লাহ, তাকে দোজখ থেকে রক্ষা করুন।’” (তিরমিজি, আলবানী বলেছেন: এটি সহীহ।)

ব্যাখ্যা: এই হাদিসগুলো আমাদের জন্য জান্নাতের প্রার্থনা এবং দোজখ থেকে আশ্রয় চাওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। এ ধরনের দোয়া করার মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের সম্ভাবনা বাড়ে এবং আখিরাতের সাফল্য অর্জনের পথ সুগম হয়।

এই দোয়ার তাৎপর্য

“আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” শুধুমাত্র একটি দোয়া নয়; এটি আমাদের চূড়ান্ত পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভর করার মাধ্যমে এটি আমাদের অন্তরে খোদাভীতি জাগ্রত করে।

আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার দোয়া পাঠের সময়

এই দোয়া পাঠ করার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। তবে কিছু নির্দিষ্ট সময়ে এটি পড়ার গুরুত্ব রয়েছে:

  • সালাতের পর।
  • রমজানের রাতে।
  • তাহাজ্জুদের সময়।
  • দোয়ার মুহূর্তে।
  • মাগরিব এবং ফজরের পরে।

আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার দোয়ার ফজিলত

দোয়ার ফজিলত নিম্নরূপ:

  • দোজখের আগুন থেকে মুক্তি: হাদিসে বর্ণিত আছে যে সাতবার এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তা’আলা দোজখ থেকে রক্ষা করবেন।
  • খোদাভীতি বৃদ্ধি: এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে দোজখের শাস্তি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা হয়, যা আমাদের আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর পথে চলার উৎসাহ দেয়।
  • আখিরাতে সাফল্য: দোয়া আমাদের আখিরাতের মুক্তির প্রতি গুরুত্বারোপ করে।
  • আত্মার প্রশান্তি: এই দোয়া আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি করে।

আল্লাহুম্মা আজিরনি দোয়া পাঠের নিয়ম

  • খালেস নিয়তে পড়ুন।
  • আরবিতে পাঠ করুন। পাশাপাশি বাংলা অর্থও স্মরণ করতে পারুন।
  • তিনবার পাঠ করুন।

এই দোয়া পাঠের উপকারিতা

আত্মার জন্য:

  • শান্তি এবং নিরাপত্তার অনুভূতি।
  • আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের দৃঢ়তা।

শারীরিক এবং মানসিক জন্য:

  • মানসিক প্রশান্তি।
  • উদ্বেগ ও হতাশা দূর হয়।

ব্যক্তিগত অভ্যাসে দোয়া অন্তর্ভুক্ত করা

এই দোয়া আপনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ করতে পারেন নিম্নলিখিত উপায়ে:

  • প্রতিদিনের সকালে এবং রাতে পড়া।
  • সালাতের পরে রুটিন তৈরি করা।
  • পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্মিলিতভাবে পড়া।

শিশুদের শেখানো

শিশুদের এই দোয়া শেখানো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ছোটবেলা থেকে তারা এই দোয়া শিখলে তাদের জীবনে খোদাভীতি এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা গড়ে উঠবে।

শেখানোর পদ্ধতি:

  • সহজ ভাষায় বাংলা অর্থ ব্যাখ্যা করা।
  • প্রতিদিন তাদের সঙ্গে একত্রে দোয়া করা।

দোয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দোয়া

“আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” দোয়ার পাশাপাশি নিম্নোক্ত দোয়াগুলিও আমাদের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:

  • আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাহ। (হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করি।)
  • আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনান্নার। (হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দোজখ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।)
  • রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতান ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান। (হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করুন এবং দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করুন।

কিছু প্রশ্ন

১. “আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” কতবার পড়তে হয়?

হাদিস অনুযায়ী এটি তিনবার বা সাতবার পড়া উত্তম।

২. এটি কি শুধু আরবিতে পড়তে হবে?

হ্যা, তবে আপনি যদি আরবি না জানেন তবে বাংলা অর্থ স্মরণ করেও পড়তে পারেন। তবে আরবিতে পড়ার চেষ্টা করা উচিত।

৩. দোয়া কি অবশ্যই সালাতের পরে পড়তে হবে?

না, এটি যে কোনো সময় পড়া যেতে পারে।

৪. এই দোয়া কি শুধুমাত্র রমজানে পড়া উচিত?

না, এটি বছরের যে কোনো সময় পড়া যায়।

৫. শিশুদের কিভাবে এই দোয়া শেখাবো?

সহজ ভাষায় অর্থ ব্যাখ্যা করে এবং প্রতিদিন তাদের সঙ্গে একত্রে পড়ার মাধ্যমে।

উপসংহার

“আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। এটি আমাদের দোজখের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার শিক্ষা দেয়। এটি প্রতিদিনের জীবনের অংশ করলে আত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর রহমত লাভ করা সম্ভব।


Share this post
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Halima
Halima
8 months ago

আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার। এটি প্রতিদিনের জীবনের অংশ করলে আত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর রহমত লাভ করা সম্ভব। আল্লাহ সবেইকে আমল করার তাওফিক দান করুন।

2
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x