আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি : আরবি । অর্থ । ফজিলত ও বিস্তারিত

পোস্টটি শেয়ার করুন

ইসলামী দোয়া ও যিকির আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক প্রশান্তি প্রদান করে না, বরং আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায়ও সহায়ক। আজ আমরা ‘আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি’ এই বিশেষ দোয়ার উপর আলোকপাত করব। এটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী দোয়া যা আমাদের দেহের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করে। এই দোয়ার গুরুত্ব, অর্থ, এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হবে।

আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি : আরবি টেক্সট

اللَّهمَّ عافِني في بدَني اللَّهمَّ عافِني في سمعي اللَّهمَّ عافِني في بصري لا إلهَ إلَّا أنت، اللَّهمَّ إنِّي أعوذُ بِكَ منَ الكُفْرِ والفقرِ اللَّهمَّ إنِّي أعوذُ بكَ من عذابِ القبرِ لا إلهَ إلَّا أنت

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ’ফিনি ফি বাদানি আল্লাহুম্মা আ’ফিনি ফি সাম’ই আল্লাহুম্মা আ’ফিনি ফি বাসরি লা ইলাহা ইল্লা আনত, আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিন আ’যাবিল কবরি লা ইলাহা ইল্লা আনত।

আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি : অর্থ

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমার শরীরে সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ, আমার শ্রবণে সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ, আমার দৃষ্টিতে সুস্থতা দান করুন। আপনার ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কুফর ও দারিদ্র্য থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। আপনার ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই।

শব্দ বিশ্লেষণ

এই দোয়ার প্রতিটি শব্দের গভীরতা ও তাৎপর্য আছে।

  • আল্লাহুম্মা (أَللّٰهُمَّ): এটি ‘হে আল্লাহ’ শব্দের আরবি রূপ। এটি সরাসরি আল্লাহর কাছে প্রার্থনার সূচনা করে।
  • আফিনি (أَفِنِي): এই শব্দটি ‘আমাকে সুস্থতা দান করুন’ বা ‘আমাকে শারীরিক সুস্থতা দিন’ বোঝায়।
  • ফি বাদানি (فِي بَدَنِي): ‘আমার দেহে’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি প্রার্থনার একটি নির্দিষ্ট দিক নির্দেশ করে, যা দেহের সুস্থতার জন্য।
আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি দোয়া

কুরআন ও হাদীসের রেফারেন্স

কুরআনে এমন অনেক আয়াত রয়েছে যেখানে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে। যদিও এই নির্দিষ্ট দোয়া সরাসরি কুরআনে নেই, তবে হাদীসে এমন অনেক দোয়া রয়েছে যা শারীরিক সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে।

  • কুরআন: আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা কর দয়ালু ব্যবহার দ্বারা, নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা আল আ’রাফ, আয়াত ৫৫)
  • হাদীস: হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন অসুস্থতা অনুভব করবে, তখন সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট শারীরিক সুস্থতা প্রার্থনা করছি।'” (তিরমিজি)

আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি এর উপকার

এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়:

  1. শারীরিক সুস্থতা: এই দোয়া আমাদের দেহের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ।
  2. মানসিক শান্তি: দোয়া পাঠ আমাদের মানসিক শান্তি ও প্রশান্তি প্রদান করে।
  3. আধ্যাত্মিক উন্নতি: এটি আমাদের আল্লাহর কাছে আরো ঘনিষ্ঠ করে তোলে এবং আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনে উন্নতি সাধন করে।

কখন আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি পড়তে হবে?

এই দোয়া যেকোন সময় পাঠ করা যেতে পারে, তবে বিশেষ করে কিছু সময়ের মধ্যে এই দোয়া পাঠ করলে তা আরো উপকারি হতে পারে:

  • ফজর ও ইশার পর: এই সময়গুলোতে দোয়া পাঠ করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
  • রোগ বা অসুস্থতার সময়: অসুস্থ অবস্থায় এই দোয়া পাঠ করলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা লাভ করা যায়।
  • যিকিরের সময়: দৈনন্দিন যিকিরের মধ্যে এই দোয়াটি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

সারাংশ

‘আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি’ একটি বিশেষ দোয়া যা আমাদের দেহের সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। এটি একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী দোয়া যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক উপকারিতা প্রদান করতে পারে। এই দোয়ার মাধ্যমে আমরা শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করতে পারি। প্রতিদিন এই দোয়া পাঠ করলে আমাদের জীবন আরো প্রশান্তি ও শান্তিতে পরিপূর্ণ হতে পারে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

প্রশ্ন ১: ‘আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি’ কোন সময়ে পড়া উচিত?

উত্তর: এই দোয়া যেকোন সময়ে পড়া যেতে পারে, তবে ফজর ও ইশার নামাজের পর, অসুস্থতার সময়, এবং দৈনন্দিন যিকিরের সময় পড়া বিশেষ ফজিলতপূর্ণ।

প্রশ্ন ২: এই দোয়া কোন হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে?

উত্তর: এই নির্দিষ্ট দোয়া কোন হাদীসে সরাসরি উল্লেখ নেই, তবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) অসুস্থতার সময় শারীরিক সুস্থতার জন্য দোয়া করার উপদেশ দিয়েছেন।

প্রশ্ন ৩: এই দোয়ার অর্থ কি?

উত্তর: এই দোয়ার অর্থ হলো “হে আল্লাহ! আমাকে আমার দেহে সুস্থতা প্রদান করুন।”

প্রশ্ন ৪: এই দোয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: এই দোয়া আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের আল্লাহর কাছে আরো ঘনিষ্ঠ করে এবং আমাদের জীবনে শান্তি ও প্রশান্তি নিয়ে আসে।

প্রশ্ন ৫: দোয়া পড়ার সঠিক পদ্ধতি কী?

উত্তর: দোয়া পড়ার সঠিক পদ্ধতি হলো খুশু ও খুযুর সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা এবং বিশ্বাস রাখা যে আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করবেন।


পোস্টটি শেয়ার করুন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x