খতমে শিফা পড়ার নিয়ম । পরিচয় ও বিধান

পোস্টটি শেয়ার করুন

খতমে শিফা কী?

‘শিফা’ শব্দের আরবী মূল শব্দ ‘شِفاء’ যার অর্থ রোগমুক্ত করা বা রোগ নিরাময়। এভাবে ‘খতমে শিফা’ অর্থ: রোগ নিরাময় করার খতম। কেউ অসুস্থ হলে তার রোগমুক্তির আশায় এই খতম পড়ানো হয়। তবে, এটি ইসলামে একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে কারণ এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতে পাওয়া যায় না। তাই, এ প্রবন্ধে আমরা খতমে শিফা পড়ার নিয়ম, এর পরিচয়, ফজিলত, এবং কেন এটি বিদআত তা বিশ্লেষণ করবো।

খতমে শিফা পড়ার নিয়ম

এই খখতমে শিফা পড়ার নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • ইস্তেগ্ফার – ১১বার
  • সূরা ফাতিহা – ১০০ বার
  • দরূদ শরীফ – ১০০ বার
  • সূরা আলাম নাশরাহ – ৭৯ বার
  • সূরা ইখলাছ – ১০০০ বার
  • পুনরায় সূরা ফাতিহা – ৭বার
  • পুনরায় দরূদ শরীফ – ১০০বার
  • তারপর এই দোয়া (একশত বার): فَسَهِّلْ يَا اِلٰهِىْ كُلَّ صَعْبٍ بِحُرْ مَتِ سَيِّدِ الْاَ بْرَارِ سَهِّلْ سَهِّلْ بِفَضْلِكَ يَاعَزِيْزُ‎ (ফাসাহ্হিল ইয়া ইলাহি কুল্লা ছা’বিন বিহুরমাতি সায়্যেদিল আবররি সাহ্হিল- সাহ্হিল বিফাদ্বলিকা ইয়া আজীজ।)
  • يَا قَاضِىَ الْحَاجَاتْ – ১০০বার
  • يَا كَفِىَ الْمُهِمَّاتْ – ১০০বার
  • يَا دَافِعَ الْبَلِيَّاتْ – ১০০বার
  • يَا مُجِيْبَ الدَّعْوَاتْ – ১০০বার
  • يَا رَافِعَ الدَّرَجَاتْ – ১০০বার
  • يَا حَلَّالَ الْمُشْكِلَاتْ – ১০০বার
  • يَا مُسَبِّبَ الْاَسْبَابْ – ১০০বার
  • ياشافی الامراض – ১০০বার
  • يَا مُفَتِّحَ الْاَبْوَابْ – ১০০বার
  • رَبِّ اِنِّىْ مَغْلُوْبٌ فَانْتَصِرْ – ১০০বার
  • يَا غَوْثُ اَغِثْنِىْ وَاَمْدُدْنِىْ – ১০০বার
  • اِنَّالِلّٰهِ وَاِنَّااِلَيْهِ رَاجِعُوْنْ – ১০০বার
  • لَااِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّىْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِيْنْ – ১০০বার‎
  • فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ وَنَجَّيْنٰهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذٰ لِكَ نُنْجِى الْمُؤْمِنِيْنْ – ১০০বার‎
  • يَا اَرْ حَمَ الرَّحِمِيْنْ – ১০০বার‎
  • অতঃপর ১০০বার দরূদ শরীফ পাঠ করে খতম শেষ করে খালেস দিলে মুনাজাত করবেন।

খতমে শিফা এর ফজিলত

বলা হয় যে, ‘ এই খতম দ্বারা রোগমুক্তি লাভ করা যায়। এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে কেউ অসুস্থ হলে তার রোগ মুক্তির জন্য এই খতম পড়ে তাকে সুস্থতা কামনা করা হয়। কিছু মানুষ এই খতমের মাধ্যমে রোগীর জন্য প্রার্থনা করেন, বিশ্বাস করেন যে এই প্রার্থনা দ্বারা আল্লাহপাক রোগমুক্তি দান করবেন এবং রোগীর সুস্থতা দ্রুত হবে। তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

খতমে শিফা কেন বিদআত?

‘খতমে শিফা’ বিদআত হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষায় পাওয়া যায় না। নিচে কয়েকটি প্রমাণ দেওয়া হলো:

হাদীসে উল্লেখ নেই: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে বা সাহাবাদের জীবনে এমন কোনো খতম পড়ার নিয়ম পাওয়া যায় না, যা খতমে শিফা হিসেবে পরিচিত।

চিকিৎসার প্রমাণ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“تَدَاوَوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلَّا وَضَعَ لَهُ دَوَاءً غَيْرَ دَاءٍ وَاحِدٍ الْهَرَمُ” (تِرْمِذِيْ، رقم ۲۰۳۸)

“তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। কেননা মহান আল্লাহ তা‘আলা এমন কোনো রোগ দেননি যার ঔষধ দেননি, একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত।” (তিরমিযী, হাদিস নং ২০৩৮)

মুমিনের দায়িত্ব: একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা এবং তাকে সাহায্য করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“حقُّ المسلمِ على المسلمِ ستٌّ: إذا لقِيتَه فسلِّمْ عليهِ، وإذا دعاك فأجِبْهُ، وإذا استنصحَك فانصحْ لهُ، وإذا عطسَ فحمدَ اللَّهَ فشمِّتْهُ، وإذا مرضَ فعُدْهُ، وإذا ماتَ فاتبَعْهُ” (صحيح مسلم 5778):

“এক মুসলিমের অপর মুসলিমের উপর ছয়টি প্রাপ্য রয়েছে: যখন তুমি তাকে সাক্ষাৎ করো, তাকে সালাম দাও; যখন সে তোমাকে নিমন্ত্রণ করে, তা গ্রহণ কর; যখন সে পরামর্শ চায়, তাকে পরামর্শ দাও; যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে, তাকে তাসমিত বলো; যখন সে অসুস্থ হয়, তাকে দেখতে যাও; যখন সে মারা যায়, তার জানাযায় অংশগ্রহণ করো।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৭৭৮)

স্কলারদের মতামত

বিভিন্ন ইসলামী স্কলারগণ ‘খতমে শিফা’ কে বিদআত হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা বিশ্বাস করেন যে ইসলামে নতুন কিছু সংযোজন করা উচিত নয়, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতে পাওয়া যায় না। কিছু উল্লেখযোগ্য স্কলারের মতামত নিচে দেওয়া হলো:

  • ইবনু তাইমিয়া (রহঃ): ইবনু তাইমিয়া বিদআতের ব্যাপারে বলেন, “যে কোনো নতুন কিছু যা কুরআন এবং সুন্নাহর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তা বিদআত।”
  • ইমাম নওয়াবী (রহঃ): ইমাম নওয়াবী বলেন, “যা কিছু ইসলামি ধর্মে নতুন সংযোজন করা হয় এবং কুরআন বা সুন্নাহর সাথে মিল নেই, তা বিদআত হিসেবে বিবেচিত হবে।”

উপসংহার

খতমে শিফা একটি জনপ্রিয় প্রথা হলেও এটি ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষায় এর কোনো প্রমাণ নেই। ইসলামের সঠিক শিক্ষা অনুযায়ী, মুমিনদের চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত এবং আল্লাহর উপর নির্ভর করে প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং বিদআত থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

এফএকিউএস

প্রশ্ন ১: খতমে শিফা কি ইসলামে অনুমোদিত?

উত্তর: না, খতমে শিফা ইসলামে অনুমোদিত নয় কারণ এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষায় পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন ২: খতমে শিফা পড়া কেন বিদআত?

উত্তর: এই খতম বিদআত কারণ এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতে নেই এবং এটি নতুন একটি প্রথা যা ইসলামিক মৌলিক শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

প্রশ্ন ৩: রোগমুক্তির জন্য কী করা উচিত?

উত্তর: রোগমুক্তির জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষায় এটাই পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৪: স্কলাররা খতমে শিফা সম্পর্কে কী বলে থাকেন?

উত্তর: বেশিরভাগ স্কলাররা এই খতমকে বিদআত হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে এটি ইসলামের মূল শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। স্কলারদের মতে, ইসলামে নতুন কিছু সংযোজন করা উচিত নয় যা কুরআন এবং সুন্নাহর সাথে মিল নেই।

প্রশ্ন ৫: খতমে শিফা কখন পড়া হয়?

উত্তর: খতমে শিফা সাধারণত কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে বা কোনো রোগ থেকে মুক্তির জন্য পড়া হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এটি আল্লাহর কাছে রোগমুক্তির প্রার্থনা এবং দোয়ার একটি মাধ্যম।

আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং বিদআত থেকে রক্ষা করুন। আমীন।


পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Comment