আল্লাহুম্মা বারিক লাহু । দোয়া, অর্থ ও ফজিলত

পোস্টটি শেয়ার করুন

দোয়া মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরির অন্যতম মাধ্যম। একইভাবে বিভিন্ন দোয়ার দ্বারা মানুষের মনজয় করা যায়। প্রতিদিন আমরা আল্লাহর নিকট কল্যাণ, রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করে নানান দোয়া করি। এ রকমই একটি দোয়া হল – আল্লাহুম্মা বারিক লাহু । এই পোস্টে আমরা এই দোয়াটির অর্থ, তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়াও এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পরিবেশন করব।

আল্লাহুম্মা বারিক লাহু অর্থ

(اللهم بارك له)“আল্লাহুম্মা বারিক লাহু” এর অর্থ হলো, “হে আল্লাহ তাকে কাল্যাণ দান করুন।” এই দোয়াটি আমরা বিশেষভাবে অন্য কারো ভালো কিছু দেখলে বা কারো ভালো কোনো সংবাদ শুনলে পড়তে পারি। তাছাড়া সাধারণত যে কারো জন্য যে কোনো সময় পড়া যাবে।

শব্দ বিশ্লেষণ

“আল্লাহুম্মা বারিক লাহু” এই দোয়াটির প্রতিটি শব্দ বা কালিমার আলাদা অর্থ ও গুরুত্ব রয়েছে। নিচে প্রতিটি শব্দের বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:

اللهم (আল্লাহুম্মা)

اللهم (আল্লাহুম্মা) এটি “ইয়া আল্লাহ” (হে আল্লাহ) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এখানে “আল্লাহ” শব্দটি ব্যবহার করে আল্লাহকে সরাসরি সম্বোধন করা হয়েছে।

بارك (বারিক)

“বারিক” শব্দটি এসেছে “باركة” (বরাকাহ) শব্দ থেকে। বারাকাহ মানে হল কোনো জিনিস থেকে কল্যাণ অর্জিত হওয়া।

“বারিক” একটি আদেশ / অনুরোধমূলক ক্রিয়া। এর অর্থ “আপনি বরাকাহ দান করুন।”

له (লাহু)

“লাহু” “له” শব্দটি (লাম এবং হুয়া সর্বনাম) এর যুক্তরূপ। অর্থ তার জন্য।
এখানে “ل” (ল) হলো প্রিপোজিশন, অর্থ জন্য। আর هو” (হুয়া) মানে তার বা তিনি। একসঙ্গে “লাহু” অর্থ দাঁড়ায় তার জন্য বা তার প্রতি।

আল্লাহুম্মা বারিক লাহু
আল্লাহুম্মা বারিক লাহু

আল্লাহুম্মা বারিক লাহু কখন বলতে হয়?

আল্লাহুম্মা বারিক লাহু দোয়াটি কারও জন্য আল্লাহর কাছ থেকে বারাকাহ চাওয়ার জন্য পাঠ করা হয়। নিম্নলিখিত প্রক্ষাপটে এই দোয়াটি করতে পারেন:

  • নববিবাহিত দম্পতির জন্য: বিয়ের পর নববিবাহিত দম্পতির জন্য বরাকাহ কামনা করে। নবী (সা.) দম্পতিদের জন্য এই ধরনের দোয়া করতেন।
  • কোনো ভালো কাজ শুরু করার সময়: কেউ কোনো নতুন উদ্যোগ, ব্যবসা, চাকরি, বা কাজ শুরু করলে এই দোয়া করতে পারেন। এটা তার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে বরাকাহ লাভের পথ সুগম করবে।
  • প্রিয়জনের জন্য: প্রিয়জনের জীবনে বরাকাহ ও কল্যাণ আল্লাহুম্মা বারিক লাহু এই দোয়া কারা যাবে। বিশেষ করে, তাদের সুখ, সুস্বাস্থ্য, এবং সফলতা চেয়ে আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতে পারেন।
  • ইবাদত বা ভালো কাজের পর: কেউ কোনো ইবাদত বা ভালো কাজ সম্পন্ন করলে আল্লাহুম্মা বারিক লাহু বলতে পারেন।

কুরআন ও হাদিসে আল্লাহুম্মা বারিক লাহু এর রেফারেন্স

আল্লাহুম্মা বারিক লাহু বা এর অনুরূপ দোয়ার ব্যবহার বিশেষত বিভিন্ন হাদিসে পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর জীবনে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বরাকাহ প্রার্থনা করেছেন। তবে আল্লাহুম্মা বারিক লাহু এই শব্দগুলো কুরআনে সরাসরি নেই। কুরআন ও হাদিসে বরাকাহ চাওয়া এবং আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে। এখানে কুরআন ও হাদিস থেকে কিছু রেফারেন্স আমরা দিচ্ছি:

কুরআনে বরাকাহ সম্পর্কিত আয়াত

رَحْمَتُ اللّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ

অর্থ: “আল্লাহর রহমত এবং তাঁর বরকাহ তোমাদের উপর বর্ষিত হোক, হে আহলে বাইত (নবীর পরিবার)।” (সূরা হুদ / ১১:৭৩)

وَهُوَ الَّذِي يُصَلِّي عَلَيْكُمْ وَمَلَائِكَتُهُ لِيُخْرِجَكُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ

অর্থ: “তিনি (আল্লাহ) তোমাদের প্রতি দয়া করেন এবং তাঁর ফেরেশতারা তোমাদের জন্য দোয়া করেন, যাতে তিনি তোমাদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন।” সূরা আল-আহযাব (৩৩:৪৩):

হাদিসে বরকত সম্পর্কিত দোয়া

নববিবাহিত দম্পতির জন্য দোয়া

নবী (সা.) নববিবাহিত দম্পতির জন্য এই দোয়াটি করতেন

“بارَكَ اللَّهُ لَكَ، وَبارَكَ عَلَيْكَ، وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِي خَيْرٍ”

(অর্থ: আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দান করুন, তোমার উপর বরকত বর্ষণ করুন, এবং তোমাদের কল্যাণে একত্রিত করুন)।

ব্যবসা বা কাজের জন্য বারাকাহ

নবী (সা.) বলেন,

“اللهم بارك لأمتي في بكورها”

(অর্থ: হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য সকাল বেলায় বরকত দিন)।

এই হাদিসটি ব্যবসা বা কাজের জন্য বরকত চাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।

খাওয়ার আগে দোয়া

নবী (সা.) খাওয়ার আগে বরকত প্রার্থনা করে নিম্নের দোয়াটি পড়তেন:

“اللهم بارك لنا فيما رزقتنا”

(অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি যে রিজিক দিয়েছেন তাতে বরকত দিন)।

আল্লাহুম্মা বারিক লাহু এর ফজিলত

এই দোয়াটি জীবনে, কাজে বা নতুন কোনো উদ্যোগে আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরাকাহ এনে দেয়। আমারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর বরকাহ, কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও সফলতার প্রতি মুখাপেক্ষি । নিচে বিশেষ কিছু ফজিলত উল্লেখ করছি :

জীবনে বরকত ও সমৃদ্ধি

এই দোয়ার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি ও কল্যাণ লাভ করা যায়। আমরা জানি না কোন কাজ আমাদের জন্য উপকারী আর কোনটি ক্ষতিকর কিন্তু আল্লাহ সব জানেন। তাই আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো কাজে বরকাহ দান করেন তখন তা কেবল উপকারই বয়ে আনে।

নতুন কাজে বরকত প্রার্থনা

কোনো উদ্যোগ বা কাজ শুরুতে যেমন: বিয়ে, ব্যবসা, চাকরি, শিক্ষা বা নতুন কোনো মিশন এই দোয়াটি সেই কাজে সফলতা ও আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্তির সুযোগ করে দেয়। আল্লাহর বরকত যে কোনো কাজকে উন্নত করে এবং তাকে দীর্ঘস্থায়ী সফলতায় উপনীত করে।

খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা

দোয়া ব্যক্তিকে খারাপ প্রভাব এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ভালো কিছু বা নতুন কিছু শুরুর সময় এই দোয়াটি করলে খারাপ ও নেতিবাচক প্রভাব থেকে সুরক্ষা লাভ করা যায়।

ইবাদত এবং কর্মে স্থিতিশীলতা

(اللهم بارك له) এই দোয়া করার মাধ্যমে আমাদের ইবাদত এবং নেক কাজগুলিতে বরাকাহ লাভ করতে পারি। কেননা কোনো ইবাদতে বরাকাহ থাকলে সেই ইবাদতের মধ্যে ধারাবাহিকতা এবং কর্মের মধ্যে স্থিতিশীলতা আসে।


পোস্টটি শেয়ার করুন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
সাদ্দাম হোসাইন
সাদ্দাম হোসাইন
30 days ago

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে কোন দোয়া পড়তে হয়?

2
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x