গোসলের ফরজ কয়টি? ১ টি না ৩ টি? কুরআন ও হাদিস যা বলে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল একটি বিশেষ বিধান। তার জন্য রয়েছে ফরজ, সুন্নত ইত্যাদি পালনের নির্ধারিত নিয়ম। গোসলের ফরজ কয়টি? এটি কি মাত্র একটি, নাকি তিনটি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। কুরআনের আয়াত এবং নবী করিম ﷺ এর সুন্নাহ থেকে জানা যায় যে গোসলের ফরজগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত।

গোসলের ফরজ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

এখানে আমরা গোসলের ফরজ বিষয়ে দুটি মত নিয়ে আলোচনা করছি। প্রথম মতটি অনুযায়ী গোসলের ফরজের মধ্যে কুল করা ও নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। এগুলো ফরজ নয়। অর্থাৎ এগুলো না করলেও গোসল শুদ্ধ হয়ে যাবে। আর দ্বিতীয় হানাফি মাযহাব অনুযায়ী গেসলের ফরজ ৩ টি। তাদের মতে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া গোসলের ফরজের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো আদায় না করলে ফরজ গোসল আদায় হবে না।

প্রথম অভিমত । গোসলের ফরজ ১ টি

তাদের মতে গোসলের ফরজ হল ১টি । আর সেটা হলো – পুরো শরীর পানিতে ভেজানো। গোসলের প্রকৃত অর্থ হলো—সারা শরীরে পানি ঢালা, যাতে পানি শরীরের প্রতিটি অংশ এবং ত্বকে পৌঁছায় এটি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর গোসলের বর্ণনা সংক্রান্ত হাদিসগুলোতে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে।

হাদিসে আয়েশা রা. বলেন,

كانَ رَسولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ إذَا اغْتَسَلَ مِنَ الجَنَابَةِ يَبْدَأُ فَيَغْسِلُ يَدَيْهِ. ثُمَّ يُفْرِغُ بيَمِينِهِ علَى شِمَالِهِ فَيَغْسِلُ فَرْجَهُ. ثُمَّ يَتَوَضَّأُ وُضُوءَهُ لِلصَّلَاةِ. ثُمَّ يَأْخُذُ المَاءَ فيُدْخِلُ أصَابِعَهُ في أُصُولِ الشَّعْرِ، حتَّى إذَا رَأَى أنْ قَدِ اسْتَبْرَأَ حَفَنَ علَى رَأْسِهِ ثَلَاثَ حَفَنَاتٍ. ثُمَّ أفَاضَ علَى سَائِرِ جَسَدِهِ. ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ. وفي رواية: أنَّ النبيَّ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ اغْتَسَلَ مِنَ الجَنَابَةِ، فَبَدَأَ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلَاثًا…، ثُمَّ ذَكَرَ نَحْوَ حَديثِ أبِي مُعَاوِيَةَ ولَمْ يَذْكُرْ غَسْلَ الرِّجْلَيْنِ

অনুবাদ: রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন জানাবাত থেকে গোসল করতেন, তখন তিনি শুরু করতেন হাত ধোয়া দিয়ে। এরপর ডান হাত দিয়ে পানি নিয়ে বাম হাতে ঢালতেন এবং গোপনাঙ্গ ধুতেন। তারপর নামাজের জন্য অযুর মতো অযু করতেন। এরপর পানি নিয়ে আঙুল দিয়ে চুলের গোড়ায় পৌঁছাতেন, যতক্ষণ না নিশ্চিত হতেন যে পানি সেখানে পৌঁছেছে। তারপর তিন মুঠো পানি মাথায় ঢালতেন। এরপর সারা শরীরের উপর পানি ঢালতেন। তারপর পা ধুতেন। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, নবী ﷺ জানাবাত থেকে গোসল করেছেন। তিনি শুরু করেছিলেন হাত ধোয়া দিয়ে তিনবার…। এরপর আবু মুআবিয়ার হাদিসের মতো বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু পা ধোয়ার কথা উল্লেখ করেননি। (সহিহ বুখারি : ২৪৮)

ইমাম ইবন হাজর আসকালানি رحمہ الله বলেন:

“এই বর্ণনা প্রমাণ করে যে, তিনি গোসলের সময় শরীরের প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছাতেন।”

এছাড়াও, জুবাইর ইবন মুত্তিম থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:

‘আমি আমার হাতের তালুতে তিনবার পানি ভরে মাথায় ঢালি, তারপর পুরো শরীরের উপর পানি ঢালি।’ (সহিহ বুখারি)

শরীর ঘষা, কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া

গোসলের সময় দেহের অংশ ঘষা, কুলি করা এবং নাক পরিষ্কার করার বিষয়ে অধিকাংশ বিদ্বানের মতে এগুলো সুন্নত, আবশ্যক নয়। হাদিসে উম্মে সালামা রা. বলেন:

“আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি তো মাথার চুল শক্ত করে বেঁধে রাখি। গোসলের সময় কি এটি খুলতে হবে?” তিনি বললেন: ‘না, শুধু তিনবার মাথায় পানি ঢেলে নাও এবং শরীরের উপর পানি ঢেলে গোসল সম্পন্ন করো।'” (সহিহ মুসলিম)

হানাফি মাযহাবে গোসলের ফরজ কয়টি?

হানাফি মাযহাবে গোসলের ফরজ ৩ টি। এগুলো হলো:

১. কুলি করা

গোসলের সময় মুখের প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছানো ফরজ। এতে মুখের ভেতর, দাঁত ও মাড়ির ফাঁক এবং গলার অংশে পানি পৌঁছাতে হবে।

২. নাকে পানি পৌঁছানো (ইস্তিনশাক)

নাকের প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছানো এবং পরিষ্কার করাও ফরজ।

কুরআন থকে দলিল

আল্লাহ تعالى বলেন:

“আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে সম্পূর্ণ পাকসাফ হয়ে যাও।” (সূরা মায়িদাহ: ৬)

এই আয়াতের আলোকে মুখের প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছানোকে গোসলের অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। কেননা ভালোভাবে গোসল গোসল করার মানে হল শরীরের সম্ভাব্য সকল অংশকে পানি দ্বারা ধৌত করা।

৩. পুরো শরীর ধোয়া

গোসলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ হলো—সারা শরীর ভিজিয়ে পানি পৌঁছানো। শরীরের এমন কোনো অংশ শুকনো থাকা যাবে না যেখানে পানি পৌঁছায়নি।

হাদিসের প্রমাণ:

হাদিসে আয়েশা رضي الله عنها বলেন:

“রাসুলুল্লাহ ﷺ গোসল করার সময় প্রথমে হাত ধুতেন, তারপর সমস্ত শরীরে পানি ঢালতেন এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিটি অংশ ভিজিয়ে নিতেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪৮)

উপসংহার

হানাফি মাযহাবে গোসলের তিনটি ফরজ হলো:
১. মুখে পানি পৌঁছানো (কুলি করা)।
২. নাকে পানি প্রবেশ করানো।
৩. সারা শরীর ভিজিয়ে পরিষ্কার করা।

উল্লেখিত ফরজগুলো সম্পন্ন না হলে গোসল সহীহ হবে না। তাই প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এগুলো জানা এবং পালন করা আবশ্যক।

আরো পড়ুন:

গোসলের জন্য নিয়ত শর্ত

গোসল একটি ইবাদত। তা বিশুদ্ধ হওয়ার উপায় কেবল শরীয়তের মাধ্যমেই জানা যায়। তাই এতে নিয়ত শর্ত। নিয়ত হলো—আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে গোসল করার জন্য অন্তরের দৃঢ় সংকল্প।

আল্লাহ تعالى বলেন:

“তাদেরকে এ ছাড়া অন্য কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে।” (সূরা আল-বায়িনাহ: ৫)

এখানে ইখলাস অর্থ হলো—আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে তাঁর জন্য ইবাদত করা এবং তাঁর নির্দেশ পালন করা। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“নিশ্চয়ই সব কাজের ফল নির্ভর করে নিয়তের উপর।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১)


পোস্টটি শেয়ার করুন