ইসলামে দরুদ প্রার্থনা হলো রাসূল ﷺ-এর প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশের এক বিশেষ মাধ্যম। বিভিন্ন দরুদের মধ্যে দরুদে শিফা বিশেষভাবে পরিচিত কারণ এটি আল্লাহর কাছে রোগ ও কষ্টের জন্য নিরাময় চাওয়ার একটি মাধ্যম। এই দরুদ পড়ার মাধ্যমে মুমিন হৃদয়ে মানসিক শান্তি, শারীরিক সুস্থতা এবং আধ্যাত্মিক প্রশান্তি অনুভব করতে পারে।
দরুদে শিফা শুধু দেহের রোগের জন্য নয়, বরং মানসিক ও আত্মিক ব্যথা দূর করতেও কার্যকর। ইতিহাসে এবং আলেমদের বর্ণনায় দেখা যায়, যারা বিশ্বাস ও খোদাভক্তি নিয়ে নিয়মিত দরুদে শিফা পাঠ করেছেন, তারা শারীরিক কষ্ট ও মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
এই ব্লগপোস্টে আমরা জানব দরুদে শিফার আরবি পাঠ, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত এবং কীভাবে এটি নিয়মিত পাঠ করা যায়। এছাড়াও, কুরআন ও হাদিসের প্রমাণের আলোকে দরুদে শিফার গুরুত্ব আলোচনা করা হবে।
দরুদে শিফা কী এবং এর গুরুত্ব
দরুদে শিফা হলো একটি বিশেষ দরুদ যা রোগ, দুঃখ, এবং কষ্ট থেকে মুক্তি প্রার্থনার জন্য পাঠ করা হয়। ইসলামে দরুদ মানে হলো নবী ﷺ-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। দরুদে শিফা শুধু দেহের রোগের জন্য নয়, মানসিক চাপ ও আত্মিক দুর্বলতা দূর করতেও সাহায্য করে।
বিশ্বাস এবং নিয়মিত পাঠের মাধ্যমে মুমিন হৃদয় শান্তি, মানসিক প্রশান্তি এবং আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করতে পারে। আলেমদের মতে, দরুদে শিফা পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও সুরক্ষা প্রাপ্ত হয়।
দরুদে শিফার আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
আরবি পাঠ:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَاةً تَشْفِينَا بِهَا مِنْ كُلِّ دَاءٍ وَسَقَمٍ وَتَقْضِي لَنَا بِهَا جَمِيعَ الحَاجَاتِ
বাংলা উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন সালাতান তাশফিনা বিহা মিন কুল্লি দা’ই ওয়া সাকাম, ওয়া তাকদী লনা বিহা জামী’ল-হাজাত”
দরুদে শিফার অর্থ
দরুদে শিফার অর্থ হলো:
“হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ ﷺ-এর উপর এমন দরুদ বর্ষণ কর যা আমাদের সকল রোগ ও অসুস্থতা থেকে মুক্তি দিক এবং আমাদের সব প্রয়োজন পূরণ কর।”
এটি মূলত শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, পাশাপাশি দোয়া কবুলের জন্য পাঠ করা হয়।

দুরুদে শিফার ফজিলত ও উপকারিতা
- রোগ ও কষ্টের মুক্তি: যারা বিশ্বাস ও নিয়মিত দরুদে শিফা পাঠ করেন, তারা শারীরিক অসুস্থতা থেকে স্বস্তি পান।
- মানসিক শান্তি: দুঃখ, চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
- আধ্যাত্মিক প্রশান্তি: আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি পায় এবং আত্মার শক্তি বাড়ে।
- সকল প্রয়োজন পূরণ: দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণে সহায়ক।
- নিয়মিত পাঠের সওয়াব: নবী ﷺ-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ।
দুরুদে শিফা কিভাবে ও কখন পাঠ করবেন
কিভাবে পাঠ করবেন:
- দরুদে শিফা পাঠ করার সময় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- পরিষ্কার জায়গায় বসে বা শুয়ে পাঠ করা যায়।
- পাঠের সময় নবী ﷺ-এর প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা অনুভব করা উচিত।
- সাধারণত ১ বার বা যতটা সম্ভব নিয়মিত পড়া যায়।
কখন পাঠ করবেন:
- নামাজের পর: বিশেষ করে ফজর, আসর বা আশরার পর।
- রোগ বা অসুস্থতার সময়: নিজে বা অন্যের জন্য।
- যে কোনো প্রার্থনার আগে: যাতে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন।
- রাতের কোনো সময়, বিশেষ করে ত্বাহাজ্জুদ বা একান্ত সময়, পাঠ করলে বেশি বরকত আসে।
কুরআন ও হাদিসে দরুদ পাঠের প্রমাণ
কুরআন থেকে প্রমাণ:
“إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا”
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতা নবীর উপর দরুদ পাঠ করে। হে বিশ্বাসীরা! তোমরাও তার প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং সালাম দাও।” – [সূরা আল আহযাব ৩৩:৫৬]
হাদিস থেকে প্রমাণ:
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে কেউ আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার জন্য দশটি সওয়াব লিখবেন এবং দশটি পাপ মুছে দেবেন।” [সহীহ মুসলিম]
এতে বোঝা যায়, দরুদ পাঠ করা শুধু নবীর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ নয়, বরং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও সওয়াবের অন্যতম মাধ্যম।
দরুদে শিফার ইতিহাস
- আধুনিক প্রচলন ও রূপ:
“দরুদে শিফা” নামে যেই বিশেষ দরুদ প্রচলিত আছে, সেটি বিভিন্ন দরুদের এক সুনির্দিষ্ট সংমিশ্রণ। এটি বহু ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির মধ্যে প্রচলিত হয়ে এসেছে একটি মনমুগ্ধকর দোয়া হিসেবে।
অনেকে বলেন, এটি “দরুদ শিফা” নাম পেয়েছে কারণ এদরু দ্বারা রোগ ও কষ্টের জন্য শিফা বা নিরাময় চাওয়া হয়।
বিভিন্ন ইসলামী ওয়েবসাইট ও ধারালো দোয়া গ্রন্থে “History and Origin of Darood Sharif” সম্পর্কে আলোচনায় বলা হয়েছে, দরুদ পাঠের মূল উৎস কোরআন ও হাদিস থেকেই, এবং যুগে যুগে আলেম ও সাধকরা বিভিন্ন ধরনের দরুদ রচনা ও প্রচার করেছেন। Darood Shareef+1
পাশাপাশি “The Excellence of Reciting the Durood Sharif” প্রবন্ধে দরুদ পাঠের গুরুত্ব ও তার উত্তম দিকগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। islamicacademy.org - কোন আলেমরা প্রচার করেছেন / প্রসার ঘটিয়েছেন:
- কিছু অনুশীলকদের ধারনা, ইমাম শফি দরুদে শিফার (বা সংশ্লিষ্ট দরুদ) প্রচলনে ভূমিকা রেখেছেন। একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “This Durood Shareef is called Durood-e-Shafi’i because Hadrat Imam Shafi‘i … used to recite it constantly …” Ashiq-E-Rasool
- তবে, এই দাবি শত-ভাগ প্রমাণিত ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায় না; বেশি অংশে এটি বিশ্বাস বা উপকথার স্তরে প্রচলিত।
- মূলভাবে, দরুদ পাঠের প্রচলন শুরু হয়েছে নবী ﷺ-এর যুগ থেকেই, ও সাহাবারা তাদের মধ্যে সংরক্ষণ ও প্রচার করেছেন।
- দরুদে শিফার নামের কারণ (কেন একে “শিফা” বলা হয়):
নাম “শিফা” অর্থ “নিরাময়, সুস্থতা”। কারণ যারা এই দরুদ পাঠ করে, তারা রোগ, ক্লেদ, দুঃখ বা বিভিন্ন হতাশা থেকে মুক্তি চায়। অর্থাৎ দরুদে “শিফা” পাঠ একটি দোয়া — “আল্লাহ! এই দরুদের মাধ্যমে আমাদের রোগ দুর কর” — এই মানসিকতা থেকেই নামটি প্রচলিত হয়েছে।
অনেকে বলেন যে দরুদে শিফার বিশেষ ব্যবহার রোগমুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে প্রচলিত হয়ে উঠেছে, তাই “শিফা” শব্দ যুক্ত হয়েছে।
হাদিসের রেফারেন্স সহ দলিল ও ফজিলত
দরুদ (সালাওয়াত) পাঠের বিষয়ে অনেক হাদিস আছে। নিচে কয়েকটি উদ্ধৃত লিখলো:
- হাদিস: “দরুদ পাঠ করলে দশ গুণ সওয়াব, পাপ মুছে ও মর্যাদা বৃদ্ধি” “Whoever sends blessings upon me once, Allah will send blessings upon him tenfold, erase ten sins, and raise him ten degrees in status.”
— (নাসাঈ) muslim.sg+1 - হাদিস: “দরুদ পাঠ ও দোয়ার সম্পর্ক” উবৈ ইবনু কাব বলেন:
“I frequently invoke blessings upon you. How much of my du‘ā’ should I devote to you?”
রসূল ﷺ বললেন: “যতটা চাও।”
উবৈ আবার বলল: “এক-চতুর্থ অংশ?”
তিনি বললেন: “আপনি যা চান করবেন, তবে যদি বেশি করেন, সেটাই আপনার বেশি মঙ্গল।”
অবশেষে উবৈ বলল: “তো সবটাই?”
তিনি বললেন: “তাহলে তোমার সব চাহিদা পুরণ হবে, এবং তোমার পাপ মাফ হবে।”
— (তীরমিযি) muslim.sg+1 - হাদিস: “দরুদ পাঠের ফলে ভালো আমল, পাপ মুছা এবং মর্যাদা বৃদ্ধি” আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত:
“যে কেউ তোমার উপর দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার জন্য দশটি ভালো আমল রচনা করবেন, দশটি পাপ মুছবেন, দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন, এবং ফেরেশতারা একইভাবে তার জন্য দরুদ পাঠ করবে।”
— মুসনাদ আহমাদ ১৬৩৫২ (আল-আলবানি “সহীহ” হিসেবে বিবেচিত) Abuamina Elias
দরুদ পাঠের সাধারণ ফজিলত — ১–২ হাদিস উদাহরণসহ
উপরের হাদিসগুলোর ফজিলতগুলি হলো:
- দরুদ পাঠের মাধ্যমে দশ গুণ সওয়াব পাওয়া যাবে। muslim.sg+2Medium+2
- পাপ মুছে দেওয়া ও মর্যাদা বৃদ্ধি — দরুদ পাঠকারীর পাপ মুছে যায় এবং মর্যাদা উপরে ওঠে। muslim.sg+2Abuamina Elias+2
- দরুদ পাঠ ও দোয়ার মিলন — দোয়ার মধ্যে দরুদ পাঠ করলে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়ে। (তীরমিযি হাদিস) muslim.sg+1
- “দরুদ পাঠ করলে ফেরেশতারা পাঠ করবে” — আল্লাহ ও ফেরেশতারা সেই ব্যক্তি সম্পর্কে আশীর্বাদ পাঠ করবেন। Medium+2muslim.sg+2
আরবি পাঠ + বাংলা অনুবাদ (উদাহরণ হাদিসের অংশ):
- আরবি অংশ:
مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلاَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا - বাংলা অর্থ:
“যে ব্যক্তি একবার আমার উপর দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাঁর উপর দশ গুণ (বরকত) পাঠ করবেন।”
— (নাসাঈ) muslim.sg+1 - আরেকটি অংশ:
إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ لاَ يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى نَبِيِّكَ صلى الله عليه وسلم - বাংলা অর্থ:
“দু’আ আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে স্থগিত থাকে; তার কোনো অংশ উঠবে না যতক্ষণ না তুমি তোমার নবীর (দরুদ) পাঠ করো।”
— (তীরমিযি) muslim.sg
দরুদে শিফা পাঠের সংখ্যা ও আমল পদ্ধতি
- নির্দিষ্ট সংখ্যা (যেমন ১১, ৪১, ১০০) সম্পর্কে আলেমদের বর্ণনা:
অনেক সাধক ও ধার্মিকরা নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারন করেছেন তবে তা ‘নিবন্ধিত শাস্ত্রীয়’ নির্দেশ নয়, বরং অভ্যাস ও ধার্মিক অনুশীলন।- উদাহরণ হিসেবে, অনেক মানুষ ৪১ বার বা ৭১ বার বা ১০০ বার দরুদ পাঠ করেন।
- কিছু প্রচলিত সূত্রে বলা হয়, আপনি দুঃসময়ে ৭০ বার বা ১৪০ বার ধরেও পাঠ করতে পারেন। truesunnah.wordpress.com+2Darood Shareef+2
- “দরুদে শিফা তাস্কিনাদায়ক” শ্লাইডশেয়ার নথিতে এমন একটি কাহিনী আছে যেখানে এক ব্যক্তি দুঃস্থ রোগের সময় এক নির্দিষ্ট সংখ্যা পাঠ করার পর রোগ হ্রাস পায় বলে বলা হয়েছে। www.slideshare.net
- কখন একটানা পাঠ করবেন, কখন দোয়ার সাথে মিশিয়ে পড়া ভালো:
- দোয়ার শুরু ও শেষে দরুদ পাঠ করা উত্তম: দোয়া শুরু করার আগে এবং দোয়া শেষে দরুদ পাঠ করলে সেই দোয়া অধিক গ্রহণযোগ্য হয় (হাদিসে নির্দেশ আছে দোয়া করার আগে ও পরে দরুদ পাঠ করা ভালো)। muslim.sg+2Medium+2
- নিয়মিত আলাদা সময়— প্রতিদিন এক সময় নির্ধারণ করে (যেমন রাতের একান্ত সময় বা সুর্যোদয়ের আগে) একটানা পাঠ করলে অভ্যাস গড়ে ওঠে।
- দুঃসময় বা রোগের সময়— বিশেষ সময়ে (যেমন রোগ, বিপদ, ক্লান্তি) দরুদে শিফা দ্রুত পাঠ করা যেতে পারে, অনেকে বিশ্বাস করেন যে বিশেষ ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বেশি পাঠ করলে বরকত বেশি হয়।
- কিছু জায়গায় বলা হয় যে দরুদ পাঠকে “দোয়ার মধ্যবর্তী সুন্দর অংশ” হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, অর্থাৎ দোয়ার মাঝখানে পাঠ করলে দোয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়।
আরো পড়ুন:
- দোয়ায়ে নূর । আরবি, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও আমল গাইড
- দরুদে তাজ । আরবি পাঠ, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও পড়ার পদ্ধতি
দরুদে শিফা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: দরুদে শিফা কতবার পড়া উচিত?
উত্তর: নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বাধ্যতামূলক নয়। যতবার সম্ভব নিয়মিত পড়া ভালো।
প্রশ্ন ২: একা পড়া ভালো নাকি জামাতে?
উত্তর: একা বা জামাতে দুইভাবেই পড়া যায়। ব্যক্তিগত প্রার্থনার সময় একা পড়া বেশি সুবিধাজনক।
প্রশ্ন ৩: দরুদে শিফা শিশু বা বয়স্কদের জন্যও কার্যকর কি?
উত্তর: হ্যাঁ, বিশ্বাস এবং সঠিক মনোযোগ থাকলে সকল বয়সের মানুষ দরুদে শিফা পাঠ করতে পারে।
প্রশ্ন ৪: কি কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বেশি বরকত আসে?
উত্তর: রাতে ত্বাহাজ্জুদ বা একান্ত সময়, নামাজের পর এবং রোগের সময় বেশি বরকত আসে।
প্রশ্ন ৫: দরুদে শিফা শুধু নিজের জন্য নাকি অন্যের জন্যও পাঠ করা যায়?
উত্তর: একদম পাঠ করা যায়। অন্যের জন্য দোয়া পাঠ করলে আল্লাহ তার জন্যও বরকত নাজিল করেন।
দরুদে শিফা ও আধ্যাত্মিক শান্তি
দরুদে শিফা পাঠের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি। নিয়মিত দরুদ পাঠ করলে হৃদয়ে বিশ্বাস ও আল্লাহর নৈকট্য অনুভূত হয়। এতে মন থেকে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ও হতাশা কমে যায়।
আলেমরা বলেন, দরুদে শিফা হলো আত্মার জন্য এক প্রকার ধ্যান ও রিহাব, যা মানুষের মনকে স্থির করে এবং দৈনন্দিন জীবনের চাপ কমাতে সাহায্য করে।
বাস্তব জীবনের উদাহরণ ও গল্প যেখানে দরুদে শিফা সাহায্য করেছে
- এক ব্যক্তির কাহিনি অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকাকালীন তিনি নিয়মিত দরুদে শিফা পাঠ শুরু করেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতি লক্ষ্য করেন।
- আরেকটি ঘটনা, একটি পরিবারে মানসিক দুশ্চিন্তা ও পারিবারিক সমস্যা কাটাতে দরুদে শিফা পাঠ শুরু করা হয়। ধীরে ধীরে পরিবারের মধ্যে শান্তি ও সম্পর্কের সুগভীরতা ফিরে আসে।
এগুলি প্রমাণ করে, দরুদে শিফা শুধু রোগ নিরাময় নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও মানসিক প্রশান্তিরও অন্যতম উপায়।
উপসংহার
দরুদে শিফা হলো নবী ﷺ-এর প্রতি ভালোবাসা, রোগ ও কষ্ট থেকে মুক্তি এবং আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভের এক শক্তিশালী মাধ্যম। নিয়মিত পাঠের মাধ্যমে:
- শরীর ও মন সুস্থ থাকে,
- আল্লাহর নৈকট্য ও বরকত বৃদ্ধি পায়,
- দৈনন্দিন জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।
অতএব, দরুদে শিফা নিয়মিত পাঠ করা প্রতিটি মুমিনের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হওয়া উচিত। এটি শুধু দোয়া নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত ও সুরক্ষার চাবিকাঠি।