না জেনে তালাক দিলে কি হয়? বিশ্লেষণ-ভিত্তিক উত্তর

শেয়ার করুন

না জেনে তালাক দিলে কি হয়? এ কথার মর্ম কী? প্রথমে সেটা পরিষ্কার করা দরকার। এ কথার মানে হতে পারে কেউ তালাকের বিধান না জেনে তালাক দিলে কী হবে? অথবা তালাক কীভাবে দিতে হয় সেটা না জেনে তালাকি দিয়ে কি হ? আমর সম্ভাব্য সকল মর্মকে অন্তর্ভুক্ত করে উত্তরটি দিচ্ছি।

না জেনে তালাক দিলে কি হয়?

হ্যা, না জেনে তালাক দিলে তা পতিত হয়। তালাক পতিত হওয়ার জন্য তালাক দাতাকে তালাক সম্পর্কিত জ্ঞান থাকা আবশ্যক নয়। তালাক পতিত হওয়ার জন্য কেবল তালাকদাতার মালিকানায় তালাবকৃত স্ত্রী থাকাটা যথেষ্ট। কেননা তালাক বলা হয় এক স্বামী-স্ত্রী একজন অন্যজন থেকে আলাদা হওয়, এবং ফিকাহবিদগণ তালাককে সংজ্ঞায়িত করে বলেছেন: ’তালাক হল, কোনো স্পষ্ট শব্দের সাথে বিবাহের চুক্তি ভেঙে দেওয়া, তালাকে উদ্দেশ্যে কোনো রূপক শব্দ ব্যবহার করে বিবাহ চুক্তি ভেঙে দেওয়া।’

স্পষ্ট তালাকের জন্য শব্দগুলি হল: (তালাক , বিচ্ছেদ এবং মুক্তি)। এছাড়া এমন শব্দ ব্যবহার করা যা তালাকের মর্ম গ্রহণের সম্ভাবনা রাখে। যেমন, আপনার পরিবারের সাথে যাও, অথবা তুমি চলে যাও ইত্যাদি।’

তালাকের পদ্ধতি হল একজন সুস্থ বিবেকধারী মানুষ তার স্ত্রীর উপস্থিতিতে বা তার অনুপস্থিতিতে তালাক বা তালাকের মর্মধারী কোনো শব্দ উচ্চারণ করা। এক্ষেত্রে তালাকের জ্ঞান থাকা বা এ সম্পর্কে স্ত্রীর জ্ঞান থাকা জরুরী না।

উত্তরের পক্ষে দলিল

তালাক, নিকাহ এবং রাজ’আ নিয়ে কৌতুক করা বা হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

ثلاث جدهن جد وهزلهن جد: النكاح والطلاق والرجعة

অর্থাৎ, “তিনটি বিষয় রয়েছে, যেগুলো মজা করা বা খেলাচ্ছলে বলা ও (স্বজ্ঞানে) কথার উক্তি, উভয়ই সঠিক উক্তিরূপে গণ্য হবে।। : নিকাহ, তালাক এবং রজ’আ” (সুনান আবু দাউদ)।

তালাকের বিষয় নিয়ে আলেমদের মধ্যে সাধারণ মতামত হলো, “যদি একজন বালেগ এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তি তালাকের স্পষ্ট শব্দ উচ্চারণ করে, তবে তা কার্যকর হবে, এমনকি যদি সে বলে যে, আমি মজা করছিলাম বা খেলাচ্ছলে বলেছিলাম।” (আল-খাত্তাবি)

কাজেই না জেনে তালাক দিলে এ কথার দ্বারা যাই উদ্দেশ্য নেওয়া হোক না কেন সেক্ষেত্রে তালাক পতিত হবে।

স্কলারদের অভিমত

ইসলামওয়েব.নেট ওয়েব সাইটে বলা হয় –

فالجاهل بحكم الطلاق العالم بمعناه يقع طلاقه، لأنه قد تلفظ بالطلاق قاصدا مختارا، ولكنه جهل العقوبة والجهل بالعقوبة لا يعذر به صاحبه

“তালাকের হুকুম সম্পর্কে অজ্ঞ, কিন্তু এর অর্থ সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তি যখন তালাক দেয়, তখন তার তালাক কার্যকর হয়। কারণ সে ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নিজ পছন্দে তালাক উচ্চারণ করেছে, যদিও সে এর শাস্তি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল। শাস্তি সম্পর্কে অজ্ঞতা তার জন্য কোনো অজুহাত ( অপারগতা) হতে পারে না।”

এই অর্থটি শাইখ ইবনে উসাইমিন রহিমাহুল্লাহ তার বিভিন্ন গ্রন্থ ও ফতোয়ায় ব্যাখ্যা করেছেন,

ومن ذلك قوله ـ رحمه الله: هنا توجد مسألة انتبهوا لها, إذا كان الإنسان يعلم الحكم، ولكن لا يدري ماذا يترتب عليه، فلا يعذر, فلو فرضنا أن رجلاً محصناً متزوجاً وزنى وهو يعلم أن الزنا حرام، لكنه لا يعلم أنه يرجم, هل نرجمه أم لا نرجمه؟ نرجمه، مع أنه يقول: لو علمت أن الإنسان يرجم ما فعلت, نقول: جهلك بالعقوبة ليس عذراً.

অনুবাদ: এর মধ্যে তিনি বলেছেন: এখানে একটি বিষয় রয়েছে, খেয়াল করুন, যদি কোনো ব্যক্তি হুকুম জানে, কিন্তু এর পরিণতি সম্পর্কে জানে না, তাহলে তাকে ছাড় দেওয়া হয় না। যদি ধরা হয় যে একজন বিবাহিত পুরুষ যিনি জানেন যে ব্যভিচার হারাম, কিন্তু জানেন না যে তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হবে, তাহলে আমরা কি তাকে পাথর ছুঁড়ে মারব না? আমরা তাকে পাথর ছুঁড়ে মারব, যদিও সে বলে: যদি আমি জানতাম যে একজন ব্যক্তিকে পাথর ছুঁড়ে মারা হয়, তাহলে আমি এই কাজ করতাম না। আমরা বলব: শাস্তি সম্পর্কে তোমার অজ্ঞতা কোনো অজুহাত নয়।”

সঠিক পদক্ষেপ

  • ইসলামিক জ্ঞান অর্জন: তালাকের বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা জরুরি।
  • আলেমদের সাথে পরামর্শ: তালাকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলেমদের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
  • বিবাহ পরামর্শক: বিবাহ পরামর্শকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে যা দাম্পত্য জীবনের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে পারে।

উপসংহার

তালাক একটি গুরুতর বিষয় এবং এটি যথেষ্ট জ্ঞান ও পরামর্শ নিয়ে সম্পন্ন করা উচিত। না জেনে তালাক দিলে দাম্পত্য জীবনে বিশৃঙ্খলা ও নানাবিধ অসুবিধা তৈরি করতে পারে। কেননা এক্ষেত্রে তালাক পতিত হয়ে যাবে। তাই, তালাকের বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা ও জ্ঞান অর্জন, আলেমদের সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য।


শেয়ার করুন

Leave a Comment