প্রেম—একটি অনুভূতি যা ভাষায় বেঁধে রাখা যায় না। কখনও তা হাসিতে ভাসায়, কখনও আবার চোখে অশ্রু আনে। প্রেমের গল্প তাই আমাদের জীবনের আয়না, যেখানে আমরা নিজেদের খুঁজে পাই, কিংবা হারিয়ে যাই অন্য কারও আবেগে। এই গল্পগুলো শুধু চরিত্র আর কাহিনি নয়, বরং হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা আবেগ, ভালোবাসা আর ত্যাগের অমলিন ছাপ।
এই পোস্টে আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ১০০টি ভিন্ন ভিন্ন প্রেমের গল্পের লিংক—যেখানে রয়েছে রোমান্স, বিচ্ছেদ, আশা, অপেক্ষা আর অনন্ত ভালোবাসার নানা রঙ। প্রতিটি গল্প আপনাকে ছুঁয়ে যাবে আলাদা আবেগে। হয়তো কোনো গল্প আপনাকে হাসাবে, কোনোটি আবার নীরবে চোখ ভিজিয়ে দেবে।
প্রেমের গল্প ১ । অপেক্ষার শেষ দেখা
শহরের ব্যস্ত রাস্তায় প্রতিদিনই তারা একে অপরকে দেখত।
রিমা প্রতিদিন অফিস যাওয়ার পথে একই কফিশপে দাঁড়িয়ে কফি নিত, আর অর্ণব দূর থেকে তাকিয়ে থাকত। প্রথমে শুধু কাকতালীয় মনে হয়েছিল—কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই “দূর থেকে দেখা” তাদের অদ্ভুত এক নীরব বন্ধনে বেঁধে ফেলল।
একদিন সাহস করে অর্ণব বলল,
— “আপনি কি প্রতিদিন এই সময়েই আসেন?”
রিমা হেসে উত্তর দিল,
— “হ্যাঁ, কফির নেশা আছে… তবে আজ মনে হয় নতুন এক সঙ্গীও পেলাম।”
সেদিন থেকে শুরু।
কফির কাপে জমে ওঠা আলাপ ধীরে ধীরে হয়ে উঠল তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। দুজনের ভেতরের দুঃখ, স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা একে অপরের সামনে সহজ হয়ে গেল।
কিন্তু জীবন সবসময় সরল পথে চলে না।
রিমার পরিবার অন্য শহরে বিয়ের প্রস্তাব ঠিক করে ফেলল। খবরটা শুনে অর্ণব ভেঙে পড়েছিল, আর রিমার চোখ ভিজে গিয়েছিল অশ্রুতে।
শেষ রাতে, ট্রেন ধরার আগে রিমা বলেছিল,
— “যদি আল্লাহ চাই, আমরা আবারও দেখা পাবো… ততদিন তুমি আমার জন্য দোয়া কোরো।”
অর্ণব শুধু একটাই উত্তর দিয়েছিল,
— “তুমি সুখী হলে, সেটাই হবে আমার ভালোবাসার পূর্ণতা।”
বছর কেটে গেল। একদিন সেই কফিশপে আবার দেখা—রিমা এবার একা, আর অর্ণব চুপচাপ কফি হাতে দাঁড়িয়ে।
চোখে চোখ পড়তেই মনে হলো, সেই অপেক্ষার শেষ দেখা—আবার শুরু হলো নতুন অধ্যায়।
প্রেমের গল্প ২ । 🌹 চিঠির শেষ লাইন
১. প্রথম দেখা
তাহমিদ একজন মেডিকেল ছাত্র। প্রতিদিন লাইব্রেরিতে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা বই পড়ত। বইয়ের ফাঁকে ফাঁকে চোখে পড়ত একটি মেয়ে—নাজিয়া। চুপচাপ কোণে বসে, সবসময় খাতা-কলমে ব্যস্ত, কিন্তু তার চোখের ভেতর যেন অজানা এক গল্প লুকিয়ে থাকত।
প্রথমদিকে শুধু তাকানো-না-তাকানোর খেলা। ধীরে ধীরে ছোট্ট “সালাম” বিনিময়, তারপর বই ধার দেওয়া, আর সেখান থেকেই শুরু হলো তাদের বন্ধুত্ব।
২. সম্পর্কের শুরু
বন্ধুত্ব খুব অল্প সময়েই অন্যরকম হয়ে উঠল।
তাহমিদ বুঝতে পারছিল, তার হৃদয় শুধু বইয়ের পাতায় আটকে নেই, বরং নাজিয়ার প্রতিটি হাসি, প্রতিটি শব্দে সে হারিয়ে যাচ্ছে।
একদিন সাহস করে বলল,
— “তুমি জানো, তোমার সাথে কথা বললে মনে হয় পৃথিবীটা সহজ।”
নাজিয়া হেসে উত্তর দিল,
— “তাহলে তুমি বুঝতে পারছ না, তোমার সাথে কথা বললে আমার পৃথিবীটাই বদলে যায়।”
সেই মুহূর্তেই দুজনের মধ্যে অদৃশ্য এক বন্ধন তৈরি হলো।

৩. বাস্তবতার ধাক্কা
কিন্তু ভালোবাসার পথ সবসময় মসৃণ নয়।
নাজিয়ার পরিবার ছিল খুব রক্ষণশীল। তারা চেয়েছিল নাজিয়ার বিয়ে একজন বিদেশফেরত ইঞ্জিনিয়ারের সাথে হোক। অন্যদিকে তাহমিদের জীবন তখনও পড়াশোনার চাপে জর্জরিত।
প্রতিদিন ফোনে কথা হতো, কিন্তু কথার মাঝেই কান্না জমে থাকত।
নাজিয়া বলত,
— “তুমি যদি আমার হয়ে কিছু বলতে পারতে বাবা-মাকে…”
তাহমিদ উত্তর দিত,
— “একদিন নিশ্চয়ই বলব, শুধু একটু সময় চাই।”
৪. বিচ্ছেদ
সময় নাজুক হয়ে উঠল।
পরিবারের চাপের কাছে নাজিয়া হার মানল। বিয়ের দিন ঠিক হলো। তাহমিদকে আর কিছু জানানো হলো না। শুধু এক রাতে নাজিয়া একটি চিঠি লিখে রেখে গেল লাইব্রেরির সেই টেবিলে—যেখানে তাদের প্রথম পরিচয় হয়েছিল।
চিঠিতে লেখা ছিল:
“তুমি যদি আমার কপালে লিখে থাকতে, পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাদের আলাদা করতে পারত না। তুমি আমার দোয়ার মাঝে থাকবে, সবসময়।”
তাহমিদ চিঠিটা বুকের কাছে চেপে ধরে অশ্রু ফেলেছিল।
৫. আবার দেখা
পাঁচ বছর পর।
তাহমিদ তখন সফল ডাক্তার। এক কনফারেন্সে গিয়ে হঠাৎ করেই ভিড়ের মধ্যে তাকিয়ে দেখল—নাজিয়া।
চোখে ক্লান্তি, কপালে সন্তানকে নিয়ে দায়িত্বের ছাপ, কিন্তু সেই চোখের গভীরে তখনও অচেনা আলো ছিল।
তারা বেশি কিছু বলেনি। শুধু একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ।
নাজিয়া ফিসফিস করে বলেছিল,
— “আমি তোমার জন্য দোয়া করতে কখনো থামাইনি।”
তাহমিদ হেসে বলল,
— “আমিও। হয়তো এই দোয়াই আমাদের আবার এক মুহূর্তের জন্য মুখোমুখি করেছে।”
এরপর তারা আলাদা হয়ে গেল।
কিন্তু দুজনেই জানত—ভালোবাসা সবসময় একসাথে থাকার নাম নয়, বরং চিরকাল হৃদয়ে জীবিত রাখার নাম।
💔 গল্পের শিক্ষা:
সত্যিকারের ভালোবাসা সবসময় হাতে হাত রেখে শেষ হয় না। কখনো সেটা হয় প্রার্থনায়, কখনো স্মৃতিতে, আর কখনো শুধুই হৃদয়ের নিঃশব্দ চিঠিতে।
প্রেমের গল্প ৩। 🌸 শেষ হয়েও হলো না শেষ
অধ্যায় ১: প্রথম স্পর্শ
বৃষ্টি ভেজা বিকেল।
ঢাকার পুরনো এক ক্যাফেতে রিদওয়ান জানালার পাশে বসে ছিল। হাতে একটা উপন্যাস, কিন্তু চোখ বারবার চলে যাচ্ছিল পাশের টেবিলে বসা মেয়েটির দিকে। সাদা শাড়ি, ভেজা চুল, হাতে গরম কফির কাপ। মেয়েটির নাম মায়িশা।
হঠাৎ জানালা দিয়ে একফোঁটা বৃষ্টির পানি ছিটকে এসে তার বই ভিজিয়ে দিল। মায়িশা হেসে নিজের রুমালটা বাড়িয়ে দিল।
— “নিন, কাগজটা ভিজে গেলে পড়া কঠিন হয়ে যাবে।”
রিদওয়ান হাসল।
— “কাগজ ভিজলে সমস্যা নেই, কিন্তু আপনি কথা না বললে আমার মনটাই ভিজে যায়।”
সেদিনই প্রথম আলাপ, আর সেই আলাপ যেন দ্রুতই গাঢ় হয়ে উঠল।
অধ্যায় ২: প্রেমের সময়
রিদওয়ান আর মায়িশা প্রতিদিনই দেখা করতে শুরু করল। তারা ঘুরত পুরান ঢাকার সরু অলিগলি, বুড়িগঙ্গার পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখত।
রাত নামলে ফোনে গল্প হতো—স্বপ্ন, ভয়, ভবিষ্যৎ নিয়ে।
এক রাতে মায়িশা বলল,
— “তুমি জানো, তোমার সাথে থাকলে মনে হয় আমি পৃথিবীর সবটুকু নিরাপত্তা খুঁজে পাই।”
রিদওয়ান উত্তর দিল,
— “আর তোমাকে ছাড়া আমি কল্পনাও করতে পারি না।”
তাদের প্রেম ছিল নিখাদ, স্বচ্ছ, আর নিঃশব্দে গভীর।
অধ্যায় ৩: বাস্তবতার ছায়া
কিন্তু জীবন সবসময় কবিতার মতো হয় না।
মায়িশার পরিবার তাদের এই সম্পর্ক মানতে চাইল না। তারা চাইছিল মেয়েটির বিয়ে হোক কানাডায় থাকা এক আত্মীয়র সাথে।
রিদওয়ান লড়াই করল। চাকরি খুঁজল, ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করল। কিন্তু সময় ছিল খুব কম।
একদিন মায়িশা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
— “আমাদের হয়তো আলাদা হয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমি চাই তুমি জানো, আমার হৃদয় শুধু তোমার।”
অধ্যায় ৪: বিদায়
মায়িশার বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেল। রিদওয়ান কিছুই করতে পারল না।
শেষ রাতে মায়িশা তার হাতে একটা ছোট্ট চিঠি দিয়ে বলল,
— “যদি কখনো তোমার জীবন নিঃসঙ্গ লাগে, চিঠিটা খুলে পড়বে।”
রিদওয়ান সেই চিঠিটা বুকের কাছে চেপে ধরল।
চোখে জল ভরে উঠেছিল, কিন্তু মুখে শুধু বলল,
— “আমাদের ভালোবাসা কখনো মরে যাবে না।”

অধ্যায় ৫: আবার দেখা
পাঁচ বছর পর, হঠাৎই তাদের দেখা হলো বিমানবন্দরে।
মায়িশার চোখে তখনও সেই একই কোমলতা, যদিও মুখে পরিণতির ছাপ। রিদওয়ানও বদলে গেছে, কিন্তু হৃদয়ের ধুকপুকানি রয়ে গেছে আগের মতো।
তারা কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল।
তারপর মায়িশা ফিসফিস করে বলল,
— “তুমি কি জানো, প্রতিদিন আমি সেই চিঠিটাই পড়ি—যেটা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম।”
রিদওয়ান বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
— “কিন্তু সেটা তো আমি কখনো খুলি নি… তুমি কিভাবে জানলে?”
মায়িশা চোখ নামিয়ে বলল,
— “কারণ আমিও একদিন তোমার জন্য একই রকম একটা চিঠি লিখেছিলাম… হয়তো আমাদের গল্পটা কাগজে শেষ হয়নি।”
অধ্যায় ৬: শেষ হয়েও হলো না শেষ
ফ্লাইট ডাক দিল।
মায়িশা ধীরে ধীরে হেঁটে গেল গেটের দিকে, রিদওয়ান চুপচাপ তাকিয়ে রইল।
তাদের হাত ছোঁয়া হলো না, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো না—কিন্তু হৃদয়ের ভেতরে এক অদ্ভুত শান্তি জমে গেল।
ভালোবাসা কখনো কখনো মিলনে শেষ হয় না।
ভালোবাসা টিকে থাকে অসমাপ্ততায়,
যেখানে বিদায়ও আসলে আরেক রকম সাক্ষাতের প্রতিশ্রুতি।
প্রেমের গল্প ৪ । অপূর্ণ সিম্ফনি
অধ্যায় ১: প্রথম সুর
সাদিয়া ছিল সংগীতপাগল মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সে সবসময় গিটার বাজাত। সেদিনও বাজাচ্ছিল রবীন্দ্রসংগীত। দর্শকের ভিড়ের মাঝে আরাফাত প্রথমবার তাকে দেখল।
গান শেষ হওয়ার পর সে এগিয়ে গিয়ে বলল,
— “তুমি কি জানো, তোমার গানটা শোনার পর মনে হলো—আমি আজ প্রথমবার হৃদয়ের ভাষা শুনলাম।”
সেদিন থেকেই শুরু। ছোট ছোট আড্ডা, গান নিয়ে আলোচনা, আর কফিশপে লুকোনো সন্ধ্যা।
অধ্যায় ২: রঙিন দিনগুলো
দিনগুলো যেন উড়ে যাচ্ছিল।
আরাফাত প্রতিদিন নতুন কিছু লিখে আনত—কবিতা, গান, বা এক লাইনের প্রেমের চিঠি।
সাদিয়া হেসে বলত,
— “তুমি না কবিতা লিখছ, নাকি আমায় ভালোবাসছ, বুঝতে পারছি না।”
আরাফাত উত্তর দিত,
— “দুটোই।”
তাদের ভালোবাসা তখন ছিল বসন্তের মতো—রঙিন, প্রাণবন্ত, আর আশা ভরা।
অধ্যায় ৩: অচেনা আঁধার
কিন্তু হঠাৎই সবকিছু বদলে গেল।
সাদিয়ার পরিবার জানতে পারল তাদের সম্পর্কের কথা। তাদের জন্য বিষয়টা ছিল অসম্ভব—ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন সামাজিক অবস্থান।
চাপ, অশ্রু, আর অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এলো।
সাদিয়া একদিন কাঁদতে কাঁদতে বলল,
— “আমাদের ভালোবাসা যদি পাপ হয়, তবে আল্লাহই বিচার করবেন। কিন্তু আমি জানি, আমার হৃদয় তোমার ছাড়া শূন্য।”
অধ্যায় ৪: বিদায়ের সুর
একদিন হঠাৎই সাদিয়া চলে গেল বিদেশে।
কোনো বিদায় নয়, কোনো প্রতিশ্রুতি নয়। শুধু আরাফাতের মেইলে এক লাইন লিখে পাঠাল—
“তোমার কবিতা গেয়ে যেও, হয়তো একদিন দূর থেকে আমি শুনব।”
আরাফাত সেই ইমেইল পড়ে রাতভর গিটার বাজাল। প্রতিটি সুরে জমা থাকল অশ্রু আর ব্যথা।
অধ্যায় ৫: আবারও মুখোমুখি
পাঁচ বছর পর।
ঢাকায় এক আন্তর্জাতিক কনসার্টে গায়ক হিসেবে মঞ্চে উঠল আরাফাত। গান শেষ হওয়ার পর দর্শকদের ভিড়ে একজোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে ছিল—সেই একই চোখ, সাদিয়ার।
চোখে চোখ পড়তেই সময় থেমে গেল।
তারা এগিয়ে এলো না, কিছু বলল না। শুধু নীরবে তাকিয়ে রইল।
সাদিয়ার ঠোঁট নড়ল—
— “আমি এখনও শুনি তোমার গান।”
অধ্যায় ৬: শেষ হয়েও হলো না শেষ
ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল সাদিয়া।
আরাফাত মঞ্চে দাঁড়িয়ে বুঝল—তাদের গল্প কোনোদিন মিলনে শেষ হবে না। এটা হবে এক অপূর্ণ সিম্ফনি,
যেখানে প্রতিটি সুরে থাকবে ভালোবাসা, কিন্তু কোনোদিন পূর্ণতা আসবে না।
প্রেমের গল্প ৫ ।
প্রেমের গল্প ৫ 💔 শেষ চিঠি । অধ্যায় ১: প্রথম দেখা
আশিক আর হাবিবা—তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে।
হাবিবার চুল খোলা ছিল, হাতে মোটা একটি মেডিকেল বই। আশিক পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হালকা হাওয়ায় পাতাগুলো উল্টে গেল। আশিক থেমে পাতা ঠিক করে দিল, আর সেই মুহূর্তে দু’জনের চোখে চোখ পড়ল।
সেই চোখে কি ছিল?
এক অদ্ভুত নীরবতা, এক অদ্ভুত টান—যা দুজনকে প্রতিদিন আরও কাছে নিয়ে এল।
অধ্যায় ২: ভালোবাসার দিনগুলো
প্রতিদিনের ক্লাস শেষে তারা ক্যাম্পাসের বড় গাছটার নিচে বসত।
হাবিবা বলত,
— “তুমি জানো, আমি সবসময় ভয় পাই—যদি কোনোদিন আমরা আলাদা হয়ে যাই।”
আশিক হেসে বলত,
— “তাহলে আমি দোয়া করব, আল্লাহ যেন তোমাকে আমার জান্নাতের সঙ্গী বানান।”
তাদের প্রেম ছিল নির্দোষ, নির্মল—একসাথে স্বপ্ন দেখা, একসাথে ভবিষ্যৎ গড়ার পরিকল্পনা।
অধ্যায় ৩: অপ্রত্যাশিত ঝড়
একদিন হাবিবার শরীর খারাপ হলো। বারবার জ্বর আসছিল, শরীর ভেঙে যাচ্ছিল।
ডাক্তার দেখানোর পর জানা গেল—সে ক্যানসারে আক্রান্ত।
আশিকের পৃথিবী যেন মুহূর্তেই থেমে গেল।
সে হাবিবার হাত ধরে বলল,
— “তুমি ভয় পেয়ো না। আমি আছি, শেষ পর্যন্ত তোমার সাথে থাকব।”
হাবিবা চোখ ভিজে হেসে উত্তর দিল,
— “তুমি যদি থেকো, তাহলে আমি মৃত্যুকেও ভয় পাই না।”
অধ্যায় ৪: লড়াই
হাসপাতালের সাদা দেয়ালে কেটে যাচ্ছিল তাদের দিন।
কেমোথেরাপিতে হাবিবার চুল পড়ে গেল। আশিকও নিজের মাথা মুড়িয়ে দিল—যাতে হাবিবা একা মনে না করে।
প্রতিদিন আশিক কোরআন তিলাওয়াত করত, তার পাশে বসে কবিতা লিখত, ছোট ছোট দোয়া শোনাত।
হাবিবা বলত,
— “তুমি জানো, পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তোমার কণ্ঠস্বর।”
অধ্যায় ৫: শেষ চিঠি
এক রাতে হাবিবার অবস্থা গুরুতর হয়ে গেল।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সে কাঁপা হাতে আশিককে একটি খাম দিল।
বলল,
— “আমি যদি আর না থাকি, তখন খুলে পড়বে।”
আশিক অঝোরে কাঁদছিল, বলছিল,
— “না! তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না।”
কিন্তু কয়েক ঘন্টা পরই হাবিবা চলে গেল… চিরতরে।
অধ্যায় ৬: অপূর্ণতার ব্যথা
কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আশিক সেই খাম খুলল।
ভেতরে ছোট্ট এক চিঠি—
“আমার ভালোবাসা,
আমি জানি তুমি কাঁদছো। কিন্তু মনে রেখো, আমার মৃত্যু আমাদের প্রেমের শেষ নয়। তুমি যখন আকাশের তারা দেখবে, আমি সেখানে তোমার জন্য দোয়া করব। তুমি যখন কোরআন পড়বে, আমি জান্নাত থেকে শুনব।
আমরা আলাদা নই, শুধু ভিন্ন জগতে আছি।
তুমি আমার শেষ দোয়া—আর জান্নাতে আমার প্রথম সাক্ষাৎ।”
চিঠির শেষ লাইন ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল—হয়তো অশ্রুর দাগে।
অধ্যায় ৭: শেষ হয়েও হলো না শেষ
আশিক আজও প্রতিরাত সেই চিঠি পড়ে।
কেউ ভাবে তার প্রেম শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু সে জানে—ভালোবাসা মৃত্যুর সীমানা মানে না।
হাবিবা তার হৃদয়ে, তার প্রতিটি দোয়ায়, আর তার প্রতিটি নিশ্বাসে বেঁচে আছে।
ভালোবাসা তাই শেষ হয়নি…
শেষ হয়েও হলো না শেষ।
গল্প ৬ । 💔 অপেক্ষার জানালা
অধ্যায় ১: প্রথম আলো
নাহিয়ান প্রতিদিন ভোরে জানালা খুলে সূর্যের আলো আসতে দিত। পাশের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা যেত এক মেয়ে—আফরিন। সাদা ওড়নায় মুখ ঢেকে রাখত, কিন্তু তার চোখে ছিল অদ্ভুত এক প্রশান্তি।
একদিন সাহস করে নাহিয়ান বলল,
— “তুমি জানো, ভোরের আলোয় তুমি যেন নামাজ শেষে করা এক দোয়ার মতো।”
আফরিন হেসে উত্তর দিল,
— “তাহলে আমি প্রতিদিন তোমার জানালায় এসে সেই দোয়া হই।”
সেই সকাল থেকেই শুরু হলো তাদের নীরব বন্ধন।
অধ্যায় ২: হৃদয়ের রঙ
সময় কেটে যাচ্ছিল।
নাহিয়ান আর আফরিন ছোট ছোট খুঁটিনাটি জিনিসে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছিল—চিঠি, বই, নামাজ শেষে করা মোনাজাত।
একদিন আফরিন বলেছিল,
— “আমি চাই, তুমি আমার কপালে সিজদার দাগ দেখতে পাও।”
নাহিয়ান উত্তর দিয়েছিল,
— “আমি চাই, তুমি আমার জান্নাতের সঙ্গী হও।”
তাদের প্রেম ছিল দুনিয়াবি রোমান্সের চেয়ে অনেক বেশি—এটা ছিল আখিরাতের আশা।
অধ্যায় ৩: কালো মেঘ
কিন্তু সুখের দিন বেশি স্থায়ী হলো না।
আফরিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল। ডাক্তার বলল—হার্টে গুরুতর সমস্যা, জটিল অপারেশন ছাড়া বাঁচার সম্ভাবনা নেই।
আফরিন হাসতে হাসতে বলল,
— “তুমি ভয় পেয়ো না। আল্লাহ চাইলে হয়তো আমি ফিরে আসব। আর যদি না-ও আসি, তবে আমি জানি, তোমার দোয়া আমার সাথে থাকবে।”
অধ্যায় ৪: শেষ সাক্ষাৎ
অপারেশনের আগের রাত।
আফরিন জানালার পাশে বসে নাহিয়ানকে বলল,
— “তুমি যদি কোনোদিন একা হয়ে যাও, এই জানালার দিকে তাকাবে। মনে হবে, আমি এখানেই আছি।”
নাহিয়ান তার হাত ধরে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলল,
— “তুমি হারিয়ে গেলে আমি বাঁচব কিভাবে?”
আফরিন মৃদু হেসে বলল,
— “ভালোবাসা হারায় না… শুধু জায়গা বদলায়।”
অধ্যায় ৫: অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি
অপারেশন টেবিলে আফরিন আর ফিরল না।
জানালার ধারে নাহিয়ান দাঁড়িয়ে রইল ঘন্টার পর ঘন্টা। তার মনে হচ্ছিল, ভোরের আলোয় এখনও সেই সাদা ওড়না দুলছে।
সে কাঁপা হাতে আফরিনের শেষ দেওয়া কোরআন খুলে দেখল। ভেতরে ভাঁজ করা এক টুকরো কাগজ—
“তুমি যদি এই চিঠি পড়, তবে বুঝবে আমি বেঁচে নেই। কিন্তু মনে রেখো, প্রতিটি ফজরের আলোয় আমি তোমার জানালায় ফিরে আসব।”
অধ্যায় ৬: শেষ হয়েও হলো না শেষ
আজও নাহিয়ান প্রতিদিন ভোরে জানালা খোলে।
মানুষ ভাবে সে পাগল—কেউ তো সেখানে নেই।
কিন্তু নাহিয়ান জানে, আফরিন আছেন।
আলোয়, বাতাসে, আর প্রতিটি নামাজের দোয়ায়।
তাদের প্রেম শেষ হয়নি।
বরং শেষ হয়েও হলো না শেষ।
প্রেমের গল্পের লিংক
কিছু ভালো ও জনপ্রিয় বাংলা প্রেমের গল্পপ্ল্যাটফর্ম ও সংগ্রহসাইটের লিংক দিচ্ছি — যেখান থেকে তুমি অনেক প্রেমের গল্প পড়তে পারবে:
- Romantic Golpo — রোমান্স প্রেমের গল্পের জটানায় অনেক গল্প পাওয়া যাবে Pratilipi
- RomanticGolpo.com — “সব গল্পের লিস্ট” বিভাগে অনেক গল্প আছে Romantic Golpo
- বাংলা প্রেমের গল্প – Pratilipi (Bangla Premer Story) Pratilipi
- গল্পপোকা — রোমান্টিক গল্পের লিংক সংগ্রহ করা হয় এখানে golpopoka.com
- “হঠাৎ তুমি এলে” — একটি প্রেমের গল্প ব্লগে premergolpokobita.blogspot.com
- “অল্প স্বল্প প্রেমের গল্প” — Pratilipi তে একটি সিরিজ Pratilipi
- Romantic Golpo (হোমপেজ) Romantic Golpo