বড় খতমের দোয়া । ব্যাখ্যা । বিশ্লেষণ । জায়েজ না কি বিদআত?

শেয়ার করুন

কিছু কিছু এলাকায় বড় খতমের দোয়া প্রচলিত। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারত উপমহাদেশে এই দোয়াটি প্রচলিত। এটি মূলত একটি বিশেষ দোয়া, যা সাধারণত সম্মিলিতভাবে বৃহৎ জামায়েতে পাঠ করা হয়, বিশেষ করে যখন কেউ মৃত্যুবরণ করেন বা কোনো বিশেষ উপলক্ষে। এই খতমের দোয়া পাঠের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ বরকত ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যদিও তা কবুল হবে কি না বা তার উল্টো গোনাহ হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বড় খতমের দোয়া এর উপাদান

এই খতমের দোয়া এর উপাদান গুলো মূলত কুরআন ও হাদিস থেকে নেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

    বড় খতমের দোয়া

    বড় খতমের দোয়া মূলত কুরআনের বিভিন্ন সূরা ও আয়াত সমূহের সমন্বয়ে গঠিত। এটি একটি বিশেষ দোয়া যা মুসলিমরা তাদের প্রয়াত আত্মীয়-স্বজনদের জন্য করেন। এই দোয়া সাধারণত কোনো ইমাম বা মাওলানা করে থাকেন এবং এতে অনেক মুসলিম একত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করেন।

    কেন বড় খতম হারাম?

    বড় খতম করা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ইসলামিক স্কলাররা মনে করেন বড় খতম হারাম বা নিষিদ্ধ, কারণ এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বা সাহাবাদের আমলে প্রচলিত ছিল না। এই কারণে এটি একটি বিদআত (ধর্মীয় নব সৃষ্টি) হিসেবে বিবেচিত। তবে, এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোড়ামির উপর। কুরআন ও সুন্নাহ এটাকে অনুমোদন করছে কি না তা বেশিভাগ মানুষ খেয়াল করে না।

    কুরআন ও হাদিসের রেফারেন্স

    বড় খতমের দোয়া সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে সরাসরি উল্লেখ নেই। তবে, দোয়া ও কুরআন পাঠের গুরুত্ব সম্পর্কে বেশ কিছু রেফারেন্স পাওয়া যায়:

    • কুরআন মজিদে বলা হয়েছে, “আর আমি মুমিনদের কুরআন থেকে যা অবতীর্ণ করি তা রোগের প্রতিকার এবং রহমত” (সূরা আল ইসরাঃ ৮২)।
    • রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কুরআনের যে কোন অংশ পাঠ করা মানুষের জন্য মঙ্গলজনক” (সহিহ মুসলিম)।
    বড় খতমের দোয়া
    বড় খতমের দোয়া

    বড় খতমের দোয়া বিদআত প্রমাণে আরবি রেফারেন্স ও বাংলা অনুবাদ

    ১. হাদিসের রেফারেন্স

    বাংলা অনুবাদ: “প্রত্যেক নতুন সৃষ্টি (ধর্মীয় বিষয়ে) বিদআত, এবং প্রত্যেক বিদআত হলো পথভ্রষ্টতা।”

    উৎস: সুনান আন-নাসাঈ ১৫৭৮, সহিহ মুসলিম ৮৬৭

    ২. ইমাম মালিকের রেফারেন্স

    من ابتدع في الإسلام بدعة يراها حسنة، فقد زعم أن محمداً خان الرسالة، لأن الله يقول: (اليوم أكملت لكم دينكم) فما لم يكن يومئذ ديناً، فلا يكون اليوم ديناً.

    বাংলা অনুবাদ: “যে ব্যক্তি ইসলামে একটি নতুন বিদআত সৃষ্টি করে এবং এটিকে ভাল মনে করে, সে মূলত মনে করে যে মুহাম্মদ (সাঃ) তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, কারণ আল্লাহ বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম পূর্ণাঙ্গ করেছি’। যা তখন ধর্ম ছিল না, তা আজও ধর্ম হতে পারে না।”

    উৎস: ইমাম মালিক, আল-ই’তিসাম, পৃষ্ঠা ৩৭

    ৩. ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) এর রেফারেন্স

    البدعة في الدين هي ما لم يشرعه الله ورسوله (صلى الله عليه وسلم)، وهو ما لم يأمر به، فإنه لا يصلح أمر الدين إلا بما شرعه الله ورسوله.

    বাংলা অনুবাদ: “ধর্মীয় বিষয়ে বিদআত হলো যা আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) অনুমোদন করেননি, যা তিনি আদেশ করেননি। আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) যা অনুমোদন করেছেন তাতেই ধর্মীয় বিষয়গুলি সঠিক হতে পারে।”

    উৎস: ইবনে তায়মিয়া, মাজমু’ আল-ফাতাওয়া, খণ্ড ১৮, পৃষ্ঠা ৩৪৬

    স্কলারদের অভিমত

    বড় খতম সম্পর্কে বিভিন্ন স্কলারের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। যারা এটি করেন তারা মনে করেন এটি একটি ভাল কাজ, যা মুমিনদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে, কারণ এতে আল্লাহর নাম ও তাঁর কিতাব পাঠ করা হয়। তবে গ্রহণযোগ্য কথা হলো এটি বিদআত। কেননা এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবীদের আমলে প্রচলিত ছিল না।

    বড় খতমের দোয়া এর বিকল্প

    এই খতমের দোয়া এর বিকল্প হিসেবে এককভাবে কুরআন পাঠ ও দোয়া করতে পারেন। কুরআনের নির্দিষ্ট সূরা ও আয়াত পাঠ করা এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যেতে পারে। এছাড়া, প্রয়াত ব্যক্তির জন্য সাদকা (দান) করা এবং তার জন্য ইস্তেগফার করা (ক্ষমা প্রার্থনা) করা যেতে পারে।

    সারসংক্ষেপ

    বড় খতমের দোয়া একটি প্রচলিত ইসলামিক প্রথা, যা কুরআনের বিভিন্ন সূরা ও আয়াত পাঠের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এটি ভারত উপমাহাদেশে প্রচলিত। এটা বিদআত। ইসলামের মূল শিক্ষা হল একাএকা আল্লাহর প্রার্থনা ও কুরআন পাঠ, যা যে কোন পরিস্থিতিতে মুমিনদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে।

    কিছু প্রশ্ন উত্তর

    প্রশ্ন: এই খতমের দোয়া কি ইসলামিক শরীয়ত অনুসারে বৈধ?

    উত্তর: না, এটি বিদআত।

    প্রশ্ন: এই খতমের দোয়া করার মূল উদ্দেশ্য কি?

    উত্তর: মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ বরকত ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। তবে এই পন্থায় দোয়া করা পাপ।

    প্রশ্ন: বড় খতমের দোয়া এর বিকল্প কি হতে পারে?

    উত্তর: বিকল্প হিসেবে এককভাবে কুরআন পাঠ ও দোয়া করা, সাদকা (দান) করা, এবং প্রয়াত ব্যক্তির জন্য ইস্তেগফার করা যেতে পারে।

    এ রকম আরো কিছু ব্লগপোস্ট


    শেয়ার করুন

    Leave a Comment