“আস্তাগফিরুল্লাহ”—এই শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই যেন হৃদয়ে এক ধরনের অনুশোচনা, বিনয় আর ক্ষমা প্রার্থনার অনুভব জেগে ওঠে। এটি কেবল একটি বাক্য নয়; বরং একজন মুসলমানের আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের এক অনন্য মাধ্যম। জীবনের নানা সময়ে আমরা ভুল করি, পাপ করি, অবচেতনে অথবা সচেতনভাবে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে ফেলি। তখন হৃদয় থেকে উঠে আসে এই অমল শব্দ—“আস্তাগফিরুল্লাহ”—“আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই”।
এই ছোট্ট বাক্যটি এতটাই অর্থবহ, এতটাই গভীর, যে এর মধ্যে রয়েছে একজন বান্দার আশ্রয়, আশা আর আত্মশুদ্ধির চাবিকাঠি। এই ব্লগপোস্টে আমরা জানব:
- “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলার প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য
- কেন এটি কেবল ঠোঁটের উচ্চারণ নয়, বরং হৃদয়ের এক গভীর আবেদন
- এর পেছনের কুরআন ও হাদিসভিত্তিক গুরুত্ব
- এবং কিভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এটি অভ্যাসে পরিণত করা যায়
আসুন, আমরা একসাথে এই মহামূল্যবান বাক্যটির গভীরে প্রবেশ করি, এবং আত্মার জন্য একটি আলো জ্বালাই।
আস্তাগফিরুল্লাহ । আরবি রূপ
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ।
বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
🌿 শব্দ বিশ্লেষ
এই বাক্যটি মূলত দুটি অংশে গঠিত:
أستغفر (আস্তাগফিরু)
এটি একটি ফিয়েল মুদারি (বর্তমান-ভবিষ্যৎ কালীন ক্রিয়া)।
মূল ধাতু: غَفَرَ (ঘাফারা) – যার অর্থ “ঢেকে দেওয়া”, “ক্ষমা করা”।
এই ধাতু থেকে استغفر তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে “استفعال” বাব (ছাঁদ) ব্যবহৃত হয়েছে।
أستغفر এর মানে দাঁড়ায়: আমি চাই যে, আমাকে ক্ষমা করা হোক।
এখানে أ উপসর্গ দ্বারা বোঝায়: “আমি” (first person singular)
استغفر পুরো মিলিয়ে: আমি ক্ষমা চাই।
الله (আল্লাহ)
সর্বশ্রেষ্ঠ সত্তা, যিনি সমস্ত গুনাহ মাফ করতে সক্ষম।
এখানে “الله” হলো مفعول به (যার কাছে ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে)।
🌿 সম্পূর্ণ অর্থ
أستغفر الله
👉🏻 আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
অথবা
👉🏻 হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।
🕋 আস্তাগফিরুল্লাহ এর গুরুত্ব কুরআনের আলোকে
ইস্তিগফার, অর্থাৎ আল্লাহর কাছে গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করা, কুরআনের অন্যতম বার্তা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর প্রিয় নবীদের মুখ দিয়ে আমাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনার শিক্ষা দিয়েছেন, আর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁর অসীম দয়ার। ইস্তিগফার কেবল গুনাহ মাফের মাধ্যম নয়, বরং জীবনের দুনিয়াবি ও আখিরাতের উন্নতির এক গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।
📖 ১. ইস্তিগফার হলো সফলতার রাস্তা
وَاسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ ۚ إِنَّ رَبِّي رَحِيمٌ وَدُودٌ
“আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তাঁর দিকে ফিরে এসো। নিশ্চয়ই আমার রব দয়ালু, প্রেমময়।” — সূরা হূদ (১১:৯০)
➡️ এই আয়াতে নবী শোয়াইব (আ.) তাঁর কওমকে সফলতা ও পরিত্রাণের পথ দেখাচ্ছেন—ইস্তিগফার ও তওবা।
🌧 ২. ইস্তিগফার আনে রিজিক, সন্তান ও বৃষ্টি
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ
“আমি বললাম: তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি পাঠাবেন, এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা শক্তিশালী করবেন।” — সূরা নূহ (৭১:১০-১২)
➡️ এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে জানাচ্ছেন, ইস্তিগফার করলে দুনিয়াবি বরকত আসে—রিজিক বৃদ্ধি পায়, সন্তান হয়, খরা দূর হয়।
💎 ৩. ইস্তিগফার গুনাহ মোচনের উপায়
وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللَّهَ يَجِدِ اللَّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
“আর কেউ যদি মন্দ কাজ করে অথবা নিজের উপর জুলুম করে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে অবশ্যই পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালুরূপে পাবে।” — সূরা আন-নিসা (৪:১১০)
➡️ এটি আশার অন্যতম বড় আয়াত। গুনাহ করে ফেললেও, ইস্তিগফার করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
🧭 ৪. নবীগণ নিজেরাও ইস্তিগফার করতেন
لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ… وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا… ثُمَّ تَابُوا لِيَتُوبُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
“নবী, মুহাজির, আনসার এবং যারা ভুল করে পিছনে থেকে গিয়েছিল, আল্লাহ তাঁদেরকে ক্ষমা করেছেন, যাতে তাঁরা তওবা করে। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু।”
— সূরা আত-তাওবা (৯:১১৮)
➡️ এমনকি নবী এবং সাহাবীরাও ইস্তিগফার করতেন। এটি ছিল তাদের চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
🕊 ৫. ইস্তিগফার হেলাফেলা করা গাফেলদের বৈশিষ্ট্য
فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِن قَبْلِكُمْ أُولُو بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الْأَرْضِ… إِلَّا قَلِيلًا مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ
— সূরা হূদ (১১:১১৬)
➡️ পূর্ববর্তী উম্মতের ধ্বংসের অন্যতম কারণ ছিল—তারা গুনাহের পর ইস্তিগফার করত না।

আস্তাগফিরুল্লাহ এর গুরুত্ব হাদীসের আলোকে
যিনি সর্বাপেক্ষা গুনাহমুক্ত, যিনি মসনূন জীবনের একমাত্র মডেল—রাসূলুল্লাহ ﷺ—তিনিই যখন দিনে বহুবার ইস্তিগফার করতেন, তখন আমাদের জন্য তার গুরুত্ব কতটা, তা সহজেই অনুমেয়। হাদীসের আলোকে ইস্তিগফার শুধু একটি দোয়া নয়, বরং এক মহান ইবাদত ও পরিশুদ্ধি প্রক্রিয়া।
🌿 ১. নবীজি ﷺ দিনে ৭০ বার বা ১০০ বার ইস্তিগফার করতেন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: وَاللَّهِ إِنِّي لَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً
“আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি: ‘আল্লাহর কসম! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার করি ও তাওবা করি।’”
— সহীহ বুখারী: ৬৩০৭
🌸 ২. ইস্তিগফার সকল গুনাহ মাফ করায়—even যদি তা আকাশ ছুঁয়ে যায়
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: إِنَّ عَبْدًا أَذْنَبَ ذَنْبًا، فَقَالَ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، فَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أَذْنَبَ عَبْدِي ذَنْبًا، فَعَلِمَ أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِالذَّنْبِ، قَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِي…
“রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: এক বান্দা গুনাহ করল, অতঃপর বলল: ‘হে আল্লাহ! আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন।’ আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা বুঝেছে যে তার এমন এক রব আছে, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন… অতএব আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।” — সহীহ মুসলিম: ২৭৫৮
💎 ৩. সবচেয়ে সর্বোত্তম ইস্তিগফার (Sayyidul Istighfar)
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ…
রাসূল ﷺ বলেন:
“যে ব্যক্তি দিনভর এই দোআ পড়ে দিনের বেলা মারা যায়, অথবা রাতে পড়ে রাতেই মারা যায় — সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” — সহীহ বুখারী: ৬৩০৬
📌 উপকারিতা: এটি সবচেয়ে উত্তম ইস্তিগফার; জান্নাতের গ্যারান্টির মতো ফজিলত রয়েছে।
☁️ ৪. ইস্তিগফার বালা-মুসিবত দূর করে
مَنْ لَزِمَ الاسْتِغْفَارَ، جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا، وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
“যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তাকে প্রত্যেক সংকট থেকে মুক্তির পথ করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা থেকে স্বস্তি দেবেন, এবং এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” — সুনান আবু দাউদ: ১৫১৮, ইমাম হাকেম সহীহ বলেছেন।
🧎 ৫. ইস্তিগফার গুনাহ মোচনের পাশাপাশি আল্লাহর নৈকট্য আনে
تُوبُوا إِلَى اللَّهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ، فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ
“তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো ও ক্ষমা চাও। আমি নিজেই প্রতিদিন একশতবার তওবা করি।”
— সহীহ মুসলিম: ২৭০২
🌍 ইস্তিগফার এর দুনিয়াবি উপকারিতা
ইস্তিগফার শুধু আখিরাতের জন্য নয়—এটি এই দুনিয়ার জীবনেও অগণিত বরকত, শান্তি ও সমাধানের চাবিকাঠি। কুরআন ও হাদীসে ইস্তিগফারের যে দুনিয়াবি সুফলগুলোর কথা এসেছে, তার কিছু নিচে দেওয়া হলো—
💧১. বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বরকতের চাবিকাঠি
🔹 কুরআনে হযরত নূহ (আ.) বলেন:
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا
“তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সহায়তা করবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান সৃষ্টি করবেন এবং নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” — সূরা নূহ: ১০-১২
📌 উপকারিতা: নতুন বৃষ্টি, ফসল, সন্তান, সম্পদ—সবকিছুর রহস্য লুকিয়ে আছে আন্তরিক ইস্তিগফারে।
🕊️ ২. দুশ্চিন্তা ও সংকট থেকে মুক্তি
🔹 হাদীসে এসেছে:
“যে ব্যক্তি ইস্তিগফারকে নিজের অভ্যাস বানায়, আল্লাহ তার জন্য প্রত্যেক সংকট থেকে মুক্তির পথ খুলে দেন, প্রত্যেক দুশ্চিন্তা থেকে স্বস্তি দেন, এবং এমন উৎস থেকে রিজিক দেন যেখান থেকে সে কল্পনাও করে না।” — আবু দাউদ: ১৫১৮; হাকেম সহীহ বলেছেন
📌 উপকারিতা: ইস্তিগফার হলো মানসিক প্রশান্তি ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার এক অলৌকিক চিকিৎসা।
💸 ৩. রিজিক বৃদ্ধি ও বেকারত্বের সমাধান
🔹 হযরত হাছান আল-বাসরী (রহ.)-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে রিজিক বৃদ্ধির জন্য দোয়ার অনুরোধ করলে তিনি বললেন:
“استغفر الله” — “ইস্তিগফার করো”
তিনি প্রত্যেক সমস্যার সমাধান হিসেবে একই উত্তর দিতেন—ইস্তিগফার।
📌 উপকারিতা: রিজিক সংকোচ, দারিদ্র্য ও অনিশ্চয়তার সমাধান ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহ নিজে খুলে দেন।
🕋 ইস্তিগফার এর আত্মিক ও আখিরাতের উপকারিতা
ইস্তিগফার শুধু মুখের কথা নয়, বরং তা হৃদয়ের গভীর অনুশোচনার বহিঃপ্রকাশ। এটি আখিরাতের সফলতা ও আত্মার পরিচ্ছন্নতার মূল চাবিকাঠি।
❤️ ১. আত্মার পরিশুদ্ধি ও প্রশান্তি
قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ
“যে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে, সে-ই সফল।” — সূরা আল-আ‘লা: ১৪
📌 উপকারিতা: গুনাহ আত্মাকে কলুষিত করে; আর ইস্তিগফার সেই কলুষতা ধুয়ে দেয়। মন হয় হালকা, হৃদয় হয় আলোকিত।
🧎♂️ ২. আল্লাহর নৈকট্য ও প্রিয় বান্দার মর্যাদা
🔹 রাসূল ﷺ বলেন:
“আল্লাহ বলেন: হে আদম সন্তান! যদি তুমি আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত গোনাহ করো, তারপর আমার কাছে ক্ষমা চাও, তবে আমি ক্ষমা করে দেব।” — তিরমিজি: ৩৫৪০
📌 উপকারিতা: একান্ত অনুশোচনায় বলা “আস্তাগফিরুল্লাহ” আল্লাহর নৈকট্যের দরজাগুলো খুলে দেয়।
☁️ ৩. গুনাহ মোচনের মাধ্যমে জান্নাতের পথ প্রশস্ত হয়
🔹 হাদীসে বলা হয়েছে:
“যে ব্যক্তি ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করবেন—even যদি তা সাগরের ফেনার মতো হয়।”
— তিরমিজি: ৩৫৭৭
🔥 ৪. জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
🔹 কুরআন বলে:
وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ ۚ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
“আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন না, যদি তুমি (হে নবী) তাদের মাঝে থাকো; এবং আল্লাহ কখনোই শাস্তি দিবেন না, যদি তারা ইস্তিগফার করে।” — সূরা আনফাল: ৩৩
🕰️ কোন সময় ও অবস্থায় ইস্তিগফার করা বেশি উপকারী
ইস্তিগফার সবসময়ই উপকারী, কিন্তু কিছু বিশেষ সময় ও অবস্থা রয়েছে, যখন তা অধিক গৃহীত হয় এবং বান্দা অধিক রহমতের হকদার হয়। কুরআন ও হাদিসে এমন কিছু সময় ও অবস্থা বর্ণিত হয়েছে:
🌙 ১. তাহাজ্জুদের শেষ প্রহরে (সাহরির সময়)
🔹 কুরআন বলে:
وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
“আর তারা সাহরির (রাতের শেষাংশে) ইস্তিগফার করতো।” — সূরা আয-যারিয়াত: ১৮
📌 এই সময় আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন:
“কেউ কি আছে আমার কাছে ক্ষমা চায়? আমি তাকে ক্ষমা করব।” — সহীহ বুখারী ও মুসলিম
🕌 ২. নামাজের পর
🔹 রাসূল ﷺ প্রতিটি ফরজ নামাজের পর তিনবার ইস্তিগফার করতেন:
أستغفر الله، أستغفر الله، أستغفر الله
— সহীহ মুসলিম: ৫৯১
📌 নামাজে যদি কোনো ত্রুটি হয়ে থাকে, তা পূর্ণ হয় ইস্তিগফার দ্বারা।
🕋 ৩. হজ, ওমরাহ, জিহাদ ও অন্যান্য ইবাদতের শেষে
🔹 কুরআনে বলা হয়েছে:
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ ۚ
“মানুষ যেখান থেকে ফিরে আসে, সেখান থেকেই তোমরাও ফিরে এসো এবং আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করো।” — সূরা বাকারা: ১৯৯
📌 ইবাদতের পর ইস্তিগফার হলো বান্দার বিনয় ও আত্মজ্ঞান প্রকাশ।
🌧️ ৪. বৃষ্টি নামার সময়
🔹 হাদিসে বর্ণিত:
“দু’টি সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না—আজান ও বৃষ্টির সময়।” — আবু দাউদ: ২৫৪০
📌 বৃষ্টির সময় ইস্তিগফার আল্লাহর রহমতের দ্বার আরও খুলে দেয়।
🥀 ৫. গুনাহ হওয়ার পরপরই
🔹 কুরআনে বলা হয়েছে:
وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً… ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ
“আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাদের গুনাহের জন্য ইস্তিগফার করে।” — সূরা আলে ইমরান: ১৩৫
📌 গুনাহর পরে বিলম্ব না করে ইস্তিগফার করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
😔 ৬. মন খারাপ বা বিপদের সময়
🔹 ইউনুস (আ.) দোয়া করেছিলেন:
لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ ٱلظَّـٰلِمِينَ
— সূরা আম্বিয়া: ৮৭
📌 এই ইস্তিগফার বিপদ থেকে মুক্তির শ্রেষ্ঠ দোয়া হিসেবে প্রমাণিত।
📜 ইস্তিগফার এর বিভিন্ন রকম শব্দসমূহ
ইস্তিগফার বিভিন্নভাবে করা যায়। রাসূল ﷺ ও সাহাবিদের বিভিন্ন ইস্তিগফারের বাণী পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় ও প্রমাণিত ইস্তিগফারের বাণী:
أستغفرُ الله
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ
অর্থ: “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
أستغفرُ اللهَ العظيم
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ আল-আযীম
অর্থ: “আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
أستغفرُ اللهَ الذي لا إله إلا هو الحي القيوم وأتوب إليه
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলাইহ
অর্থ: “আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যাঁর ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও সকল কিছুর ধারক, এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করছি।”
🔸 হাদিসে এসেছে, এটি পড়লে গুনাহ মাফ হয়ে যায়—even যদি যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা হয়।
— তিরমিজি: ৩৫৭৭
سيد الاستغفار
(সবচেয়ে উত্তম ইস্তিগফার)
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ…
(পূর্ণরূপ আমি চাইলে পরের অংশে দিতে পারি)
📌 এই দোয়াটি সকাল-সন্ধ্যায় পড়লে জান্নাত নিশ্চিত, যদি সে ওই দিন/রাতে মারা যায়। — বুখারী: ৬৩০৬
🔚 উপসংহার
ইস্তিগফার শুধু কোনো সংকটের ওষুধ নয়— এটি একটি ধারাবাহিক ইবাদত, আত্মশুদ্ধির পথ এবং আল্লাহর কাছে ফিরে আসার স্থায়ী রাস্তা। সঠিক সময়ে, সঠিক হৃদয়াবেগ নিয়ে ইস্তিগফার করলে বান্দার জীবন বদলে যেতে পারে।